বাংলাদেশ-তুরস্ক বৈঠকে সম্পর্ক জোরদারে বহুমুখী আলোচনা

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৭ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:০৩ অপরাহ্ণ   |   ৫১ বার পঠিত
বাংলাদেশ-তুরস্ক বৈঠকে সম্পর্ক জোরদারে বহুমুখী আলোচনা

বাংলাদেশ ও তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের চতুর্থ পলিটিক্যাল কনসালটেশন মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম ও তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. বেরিস একিনজি নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
 

উষ্ণ ও গঠনমূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতিফলন দেখা যায়। উভয়পক্ষই শান্তি, স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
 

বৈঠক শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, তুরস্ক বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠায় নেওয়া সংস্কারমূলক পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। পাশাপাশি তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রচেষ্টায় সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
 

দুই দেশ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রকে বৈচিত্র্যময় করা, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং যৌথ উদ্যোগের সম্প্রসারণে নানা পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুরস্কের আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তুরস্কের সহায়তাও চাওয়া হয়।
 

প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে বিদ্যমান সহযোগিতা পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষ এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করে। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যৌথ প্রচেষ্টার ওপর জোর দেওয়া হয়।
 

বৈঠকে জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে তুরস্কের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের টেকসই জ্বালানি খাতে অংশীদারিত্ব বাড়ানোর সম্ভাবনা আলোচনা হয়। একইসঙ্গে শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আইসিটি, যুব ও ক্রীড়া, এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে মানুষে-মানুষে সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে মতবিনিময় হয়।
 

বাংলাদেশ জুলাই বিপ্লবের আহতদের চিকিৎসা এবং কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তুরস্কের ফিল্ড হাসপাতাল পরিচালনার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতে সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় এবং রোহিঙ্গা সংকটে তুরস্কের রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তার বিষয়েও আলোচনা হয়।
 

রোহিঙ্গা ইস্যুতে উভয় দেশ ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও তাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর জোর দেয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তুরস্কের সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতা জানায়।
 

বৈঠকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রসঙ্গে উভয় দেশ স্বাগত জানায় এবং ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমান্ত অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে তাদের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে।
 

গাজায় নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষের ওপর চলমান গণহত্যা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও অবাধ মানবিক প্রবেশাধিকারের আহ্বান জানানো হয়।
 

জাতিসংঘ, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং ডি-৮সহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক মঞ্চে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেয় উভয় দেশ। বাংলাদেশ তুরস্ককে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৫১তম এবং ডি-৮ কমিশনের ৪৯তম অধিবেশন সফলভাবে আয়োজনে অভিনন্দন জানায়।
 

দুই দেশ বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক চুক্তি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে এবং ঝুলে থাকা চুক্তি ও সমঝোতাপত্র দ্রুত চূড়ান্ত করার বিষয়ে একমত হয়।
 

বৈঠক শেষে উভয়পক্ষ আঙ্কারায় পরবর্তী পলিটিক্যাল কনসালটেশন আহ্বানের বিষয়ে সম্মত হয়। প্রতিনিধি দলগুলো বিশ্বাস প্রকাশ করে যে, এ বৈঠকের ফলাফল বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্ককে আরও গভীর ও শক্তিশালী করবে।