দাম কমাতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি

প্রকাশকালঃ ২১ মে ২০২৩ ০৪:৩৭ অপরাহ্ণ ১৫৯ বার পঠিত
দাম কমাতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি

দাম কমাতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হতে পারে বলে এক সপ্তাহ আগে জানিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। আর সম্প্রতি পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি লিখেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। দফায় দফায় সরকারের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথা বলা হলেও বাজারে এখন পর্যন্ত দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই।

রাজধানীর মগবাজার ও মালিবাগ বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে গতকাল শনিবার জানা গেছে, বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। এসব এলাকার পাড়া-মহল্লার দোকানে তা কেজিপ্রতি আরও পাঁচ টাকা বেশি। তাতে কোথাও কোথাও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি।

তবে যেসব এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকানে ভ্যানগাড়িতে করে পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে থাকে, সেখানে কেজিতে দু–তিন টাকা কম পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে।


মালিবাগ বাজারের গাজী স্টোরের বিক্রেতা রুবেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে না থাকায় দেশি পেঁয়াজের দাম গত এক সপ্তাহে কেজিতে ১০ টাকার বেশি বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, বাজারে এখন দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের প্রতি কেজির দর ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সংস্থাটির হিসাবে ১ মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম ১২১ শতাংশ ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৮২ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের এই সময়ে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।


রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আবদুল মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, পাইকারিতে মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়। খুচরায় এ দাম আরও একটু বেশি। গত কিছুদিন বাজারে দাম কিছুটা বেড়েছে। আমদানির অনুমতি দিলে বাজারে দাম কমে আসতে পারে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।


বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত শুক্রবার জানিয়েছেন, পেঁয়াজের বাজার না নামলে আমদানি করার অনুমতি দেবে সরকার। আর মাঠপর্যায়ে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

এক সপ্তাহ আগে ঠিক একই ধরনের কথা জানিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়ও। উৎপাদন ও মজুত বিবেচনায় দেশে এই মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই বলেও কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়।


পেঁয়াজের উৎপাদন, চাহিদা ও আমদানির তথ্য তুলে ধরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গত সপ্তাহে জানায়, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনের বেশি। এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। আর বর্তমানে মজুত আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আরও জানানো হয়, বর্তমানে ১ কেজি দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি উন্মুক্ত থাকার কারণে পেঁয়াজ আমদানি বেশি হয়েছিল। তখন দেশি পেঁয়াজের বাজারদর কম ছিল, প্রতি কেজির দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। তাই কৃষকেরা কম দাম পেয়েছিল।

সে জন্য পেঁয়াজ চাষে কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখতে এবার আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। পেঁয়াজ আমদানি করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ শাখা থেকে আমদানির অনুমতি বা আইপি নিতে হয়। সেটা এখন বন্ধ রয়েছে।