সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রেগুলোতে ভ্রমন

প্রকাশকালঃ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:১২ অপরাহ্ণ ২৪৯ বার পঠিত
সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রেগুলোতে ভ্রমন

চা-বাগান, পাহাড়, টিলা, ঝরনা, সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা শীতল পানির স্রোতধারা, জলার বন, নদী-হাওর বেষ্টিত অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন জনপদ সিলেট বৃষ্টিমাখা রোদে যেন প্রকৃতি সৌন্দর্যের ডালি মেলেছে। প্রকৃতির এক অপরূপ দান সিলেট বিশেষ করে সাদা পাথর, জাফলং সহ  পর্যটন স্পটগুলো। দিনে নীল আকাশে প্রচণ্ড রোদের খেলায় হাওর জলাশয়গুলো আরো নীল আকার ধারণ করে। আর রাতে বৃষ্টির পরশ এক ভিন্ন আবেশ ও অনুভূতির সৃষ্টি করে। যদিও কিছুদিন পর রোদের তীব্র তেজ কমে কাশবনে উত্তরের হাওয়া বসবে ঝির ঝির করে। কিন্তু সৌন্দর্যপিপাসুরা তার অপেক্ষায় নেই। নানা বয়সের পর্যটক রোদ-বৃষ্টির খেলা দেখতে ছুটে চলছেন সিলেটের সাদা পাথর, পান্তুমাই, জাফলং, সবুজ চা-বাগান, লালা খালসহ আনাচে-কানাচে। কিন্তু যোগাযোগ অবকাঠামো সহ অপ্রতুল সুযোগ সুবিধার অভাবে পর্যটকদের ভোগান্তিও কম হচ্ছে না।

সিলেটের পর্যটন স্পটগুলো অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। কিন্তু যথাযথ উদ্যোগের অভাবে এটি অর্থনৈতিক বিকাশে আজও সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারছে না। সিলেটের গোয়াইন ঘাটের জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথরে পর্যটকদের যে ভীড় হয় বিশেষ করে সরকারি ছুটির দিনে—তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু ঐ স্পটগুলোতে সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা হয়নি সে ভাবে। সাদা পাথরের মূল স্পটে যেতে প্রথমে নৌকা, পরে তপ্ত বালি ও বোল্ডারে পথ পেরিয়ে স্বচ্ছ জলের স্রোতধারার স্পর্শ পেয়ে তৃপ্ত হন। তবে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন। শিশু, মহিলা ও বয়ষ্কদের জন্য স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া বৃষ্টি নামলে তীব্র স্রোতের টানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রচণ্ড  ভীড়ে অনেক সময় লোকজন ভেসে যায়। কেউ খেয়ালও করতে পারেন না।  সাদা পাথরে প্রতিদিন ৭-৮ হাজার লোক সমাগম ঘটে। ছুটির দিনে   লক্ষাধিক পর্যটক আসেন বলে জানিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি হিল্লুল রায়। তিনি জানান, থানা পুলিশ ও ট্যুরিষ্ট পুলিশ মিলে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। 

প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ে একইভাবে পর্যটকদের সমাগম ঘটে। ছুটির দিন বিজিবি ক্যাম্পের পাশের রাস্তা পার হওয়া যায় না। পাহাড়ের দুপাশের ঢালুতে টং দোকান থাকায় এ পথটি সরু হয়ে গেছে। দোকানিরা জানান, তারা নিরুপায়। বালি-পাথর আহরণ বন্ধ। তাই তারা দোকান দিয়ে বসে আছেন। পেটেতে ভাত দিতে  হবে। মূলত এসব স্পটে তেমন শৃঙ্খলা নেই। আর শৃঙ্খলার উদ্যোগ নিলে শৃঙ্খলার নামে শুরু হয় চাঁদাবাজি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নের দাবি জোরাল হয়ে ওঠেছে। এক সময় জাফলংয়ে হোটেল মোটেলের তীব্র অভাব ছিল। তবে সে অভাব এখন পূরণ হতে চলেছে।


ইদানিং বেশ কিছু বেসরকারি উদ্যোগে সিলেটে হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ গড়ে উঠায় এলাকার রূপ পাল্টাতে শুরু করেছে। ‘সাদা পাথর হোটেল অ্যান্ড রেষ্টুরেন্ট’ নামের মানসম্মত একটি সুন্দর হোটেল ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠেছে। তবে এটিও চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। এদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল সিলেটের পর্যটন খাতের বিকাশে কিছু কার্যকর  উদ্যোগ নিয়েছে। একটি সড়কের আওতায় অন্তত ২৪টি পর্যটন স্পটকে সংযুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। অবশ্য এ উদ্যোগ কবে বাস্তবায়িত হবে তা বলা যাচ্ছে না।

সূত্র জানায়, গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সিলেটের পর্যটন বিকাশের বিষয়টি তুলে ধরেন সিলেটের তত্কালীন জেলা প্রশাসক মুজিবুর রহমান। তিনি সিলেট-জাফলং-সাদাপাথর-ওসমানী বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার করা হলে অনেক বেসরকারি বিনিয়োগকারী পর্যটন খাতে বিনিয়োগে উত্সাহিত হবেন বলে প্রস্তাব করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকের প্রস্তাবটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বর্তমানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।


সিলেটের ঐতিহ্যবাহী হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার, হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, লাক্কাতুড়া চা-বাগান, বাইশটিলা, খাদিম রিসোর্ট, সাদা পাথর, বিছানাকান্দি, উতমাছড়া, দমদমছড়া, লক্ষণছড়া, পান্থুমাই, খাসিকম, জাফলং, তামাবিল, নলিউরি ফলস, ডিবিরহাওর, জৈন্তাপুর, লালাখাল ও জলার বন রাতারগুল, খাসয়া পনপুঞ্জিসহ ২৩টি পর্যটন স্পট ঘুরে দেখতে অভ্যন্তরীণ সড়ক উন্নয়নের  প্রচেষ্টা চলছে। সড়কটি তৈরি হলে দু’দিনেই সিলেটের এসব স্পট ঘুরে দেখা যাবে। এতে পর্যটকদের সময়, ভোগান্তি ও ব্যয় কমে আসবে। স্থানীয় আর্থর্-সামাজিক অবস্থায়ও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। 


জানা যায়, শুধু জাফলং থেকে সাদা পাথর পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করা গেলে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। সওজ সূত্র জানায়, এজন্য প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও প্রশস্ত করতে হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সিলেটে পর্যটন খাত আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে সওজ বিভাগ প্রাথমিক সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে।

সিলেটের প্রায় সবকটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায়। কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে একটি পর্যটন স্পট থেকে অন্য স্পটে যেতে নানা ভোগান্তি ও অর্থের অপচয় হয়। অনুন্নত সড়ক যোগাযোগ অব্যবস্থার কারণে সম্ভাবনাময় অনেক পর্যটনকেন্দ্রে পৌঁছাতেই পারেন না পর্যটকরা।


জানা গেছে, প্রস্তাবিত সিলেট-ওসমানী বিমানবন্দর-সাদা পাথর পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই ভালো। অন্যদিকে সিলেট শহর থেকে জাফলং ও তামাবিল পর্যন্ত  সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা চলনসই। ঢাকা-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ শেষ হলে যোগাযোগব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। কিন্তু সাদা পাথর-জাফলং অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগব্যবস্থাটি অত্যন্ত বিরক্তিকর ও ব্যয়সাপেক্ষ। এজন্য প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও প্রশস্ত করতে হবে।

গোয়াইনঘাটের আলী হোসেন বলেন, ‘পর্যটকরা সিলেট নগরী থেকে সাদা পাথর বেড়াতে গেলে ফেরার পথে কেবল রাতারগুল যেতে পারেন কিছুটা সহজে। তবে এই পথে জাফলং, পান্থুমাই, জাফলং লালাখালসহ আরও দু-একটি স্থানে যাওয়া গেলেও ভোগান্তি, সময় ও অর্থ খরচ হয় অনেক। তাই পর্যটকরা সিলেট শহরে ফিরে পরদিন সিলেট-তামাবিল সড়ক হয়ে জাফলং, লালাখাল বা অন্যান্য স্পটে ঘুরতে যান। এতে ব্যয় ও সময়ের অপচয় ঘটে। তবে প্রস্তাবিত অভ্যন্তরীণ ৩০ কি.মি সড়ক নির্মাণ ও সংসড়ার হলে পর্যটকদের সুবিধা হবে অনেক।’ 

সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর সড়কটি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এ সড়কের কিছু অংশ এলজিইডির আওতাধীন। প্রস্তাবিত সড়কের মধ্যে কী কী স্থাপনা এবং নদী-নালা-খাল ও কালভার্ট রয়েছে তারও সমীক্ষা চালানো হচ্ছে।’