প্রকাশকালঃ
২৩ মার্চ ২০২৪ ১২:১২ অপরাহ্ণ ২২৪ বার পঠিত
আল্লামা তকি উসমানি তাঁর এক ভ্রমণের স্মৃতিচারণা করে বলেছেন, কয়েক বছর আগে এক সফরে আমেরিকার টেক্সাস প্রদেশের প্রসিদ্ধ শহর হিউস্টনে (houston) গিয়েছিলাম। নাসার (NASA) সবচেয়ে বড় কেন্দ্র সেখানে অবস্থিত। এটা নাইন-ইলেভেনের আগের কথা। এক পর্যায়ে আমরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অংশে প্রবেশ করলাম, যেখান থেকে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
সবার জন্য সেখানে প্রবেশের অনুমতি নেই। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম, দেয়ালে একটি বোর্ড লাগানো আছে। তাতে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা আছে— You are being watched অর্থাৎ ‘আপনার প্রতি লক্ষ রাখা হচ্ছে’ বা ‘সর্বক্ষণ আপনি আমাদের নজরে রয়েছেন’। ব্যস, এটুকুই! কোনো সিকিউরিটি গার্ড নেই, পুলিশ নেই।
শুধু এটুকু লেখা—‘আপনাকে নজরদারি করা হচ্ছে’। প্রবেশকারী বোর্ডের লেখা পড়েই বুঝতে পারে যে গোপন ক্যামেরার সাহায্যে তার প্রতিটি কার্যকলাপ লক্ষ রাখা হচ্ছে, ফলে সে তত্ক্ষণাৎ সতর্ক হয়ে যায়। সে এমন কোনো কাজ করে না, যার ফলে তাকে জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হয়। লেখাটি পড়ে আমি ভাবলাম, এ বোর্ডের কারণে এখানে প্রবেশকারী সবাই সতর্ক হয়ে যায়।
এ অনুভূতিই মহানবী (সা.) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যে You are being watched by Allah taala অর্থাৎ ‘আল্লাহ তাআলা সব সময় তোমাকে দেখছেন’। পবিত্র মাহে রমজান মুসলমানদের মধ্যে এমনই অনুভূতি জাগ্রত করতে চেয়েছে। তাগিদ দিয়েছে তাকওয়াভিত্তিক সমাজ গঠন করতে। ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন’—এই অনুভূতিই রমজানের শিক্ষা। তাকওয়ার ক্ষেত্র সীমাহীন বিস্তৃত।
এটি যেকোনো ধরনের পদস্খলন থেকে মানুষকে রক্ষা করে। সব মন্দ, অশ্লীল কথা, কাজ ও পরিবেশ থেকে ফিরিয়ে রাখে। প্রবৃত্তির অভিলাষ ও দুষ্টচক্রের ফাঁদে পড়ে নিজের, পরিবার, সমাজ ও দেশের ক্ষতি করা থেকে রক্ষা করে। তাকওয়া জীবনকে এমন এক সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন করে, যা সব ধরনের ভীতি, লোভ-লালসা, প্ররোচনা-প্রতারণা, প্রলোভন-পদস্খলন থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখে। অন্ধকারাচ্ছন্ন গভীর সমুদ্রে দিকদর্শন যন্ত্র যেমন সমুদ্রাভিযাত্রীকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে, সমস্যাসংকুুল জীবন পথে তাকওয়াও তেমনি মানুষকে নির্ভুল পথের সন্ধান দেয়। ভালো কাজ গ্রহণ করার তীব্র আগ্রহ এবং মন্দ কাজ পরিহার করে চলার দৃঢ় মনোবলই হচ্ছে তাকওয়া।
পবিত্র কোরআনে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিধান নাজিলের পরই তাকওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। এর কারণ হলো শত আইন-কানুন, কলাকৌশল, পুলিশ পাহারা, চৌকিদার দিয়েও অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়, যতক্ষণ না অপরাধী মানসিকভাবে সে অপরাধ বর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ না হয়। বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে এর সত্যতার সপক্ষে অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই ইসলাম অপরাধ দমনের সদিচ্ছা নিয়ে মানুষকে প্রথমে কোনো অপরাধ পরিত্যাগ করতে বলেছে। তারপর অপরাধের পার্থিব-অপার্থিব শাস্তি ঘোষণা করেছে। এরই সঙ্গে মানুষকে আল্লাহর ভয় ও তাকওয়া অর্জন করতে বলেছে। এটাই মূলত অপরাধ ও পাপাচার ত্যাগ করার মূলমন্ত্র।