ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ থাকায় ১৩ দিনে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ক্ষতি

প্রকাশকালঃ ০১ আগu ২০২৪ ১২:০২ অপরাহ্ণ ৬১৪ বার পঠিত
ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ থাকায় ১৩ দিনে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ক্ষতি

১৪ দিন পর অবশেষে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটক চালু হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ২টার পর এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আবার চালু হয়েছে। ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ থাকায় দেশের অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা খাতে গত ১৩ দিনে প্রায় এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।

 

গতকাল আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনে সংবাদ সম্মেলনে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ‌মেদ পলক জানান, বিকেল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো খুলে দেওয়া হবে।


জুনাইদ আহ‌মেদ পলক বলেন, ‘যেসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফরম ব্যবহারে কিছুটা সময়ের জন্য সাময়িকভাবে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিলাম, সার্বিক বিবেচনায় আজ তা প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউব বিকেলের মধ্যে সব চালু হবে।’ প্রতিমন্ত্রী জানান, ইউটিউব ই-মেইলে ব্যাখ্যা দিয়েছে। ফেসবুকের প্রতিনিধি অনলাইনে সরকারের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আর টিকটকের প্রতিনিধি সশরীরে হাজির হন।


স্থানীয় ফ্যাক্ট চেকার নিয়োগে তারা আরো যত্নশীল হবে বলে জানা গেছে। ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউব বাংলাদেশের সংবিধান ও কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বাংলাদেশে সেবা দিতে সম্মত হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। জানা গেছে, ফ্যাক্ট চেক ও এআই প্ল্যাটফরম ব্যবহারে তারা আরো গুরুত্ব দেবে। আগামী দিনে তারা আরো সতর্ক থাকবে এবং বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করবে।

 

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার মধ্যে গত ১৭ জুলাই রাতে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার। একই সঙ্গে বন্ধ করা হয় ফেসবুক, টিকটকসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। পাঁচ দিন পর ব্রডব্যান্ড এবং ১০ দিন পর মোবাইল ইন্টারনেট চালু হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ছিল ফেসবুকসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যদিও ‘ভিপিএন’-এর মাধ্যমে অনেকে ফেসবুক ব্যবহার করেছেন।

 

ই-কমার্স খাত

ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ থাকায় দেশের অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা খাতে গত ১৩ দিনে এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন ফেসবুকভিত্তিক এফ-কমার্স খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। গতকাল বুধবার রাজধানীর বনানীতে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার।

 

ব্যবসার কোন খাতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে তার একটি প্রাথমিক হিসাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রথম ১০ দিনে এই ক্ষতির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। শমী কায়সার জানান, ইন্টারনেট বন্ধের কারণে প্রথম ১০ দিনে এফ-কমার্স খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ই-কমার্স খাতে ৪০০ কোটি, অনলাইনভিত্তিক পর্যটন (ই-ট্যুরিজম) খাতে ৩০০ কোটি ও অনলাইনভিত্তিক সরবরাহ (ই-লজিস্টিক) খাতে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

 

এফ-কমার্স খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পরিস্থিতি বর্ণনা করে ই-ক্যাব সভাপতি বলেন, তাঁদের অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া কিংবা কর্মীদের বেতন বন্ধের মতো বিভিন্ন সংকটে পড়েছেন। এই সংকট কাটাতে তাঁদের জন্য স্বল্প সুদে ও বিনা জামানতে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি ।

 

ই-ক্যাবের তথ্য বলছে, ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত হওয়ায় দারাজ, চালডালের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ফেসবুকনির্ভর ছোট উদ্যোক্তারাও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সব মিলিয়ে এ খাতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ই-ক্যাব।

 

ই-ক্যাবের সহসভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন বলেন, ‘ই-কমার্স রিলেটেড অনেক প্রকৃতির সার্ভিসের যে প্ল্যাটফরম, সেখানে প্রতিদিন আরো ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকার লোকসান আছে। সব মিলায়ে যদি বলি, তাহলে এটা ১৪০ থেকে ১৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি।’ অনলাইননির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে সরকারি প্রণোদনা ও বিভিন্ন নীতি সহায়তা চেয়েছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

 

সফটওয়্যার খাত

এদিকে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) জানিয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে পাঁচ দিনে সফটওয়্যার খাতের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০০ কোটি টাকার ওপরে।

 

ফ্রিল্যান্সিং খাত

সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ফ্রিল্যান্সাররা। কেননা এ খাতের পুরোটা ইন্টারনেটনির্ভর। কয়েক দিন ইন্টারনেট না থাকায় ফ্রিল্যান্সাররা গ্রাহকের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারেননি। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সভাপতি ডা. তানজীবা রহমান বলেন, ‘আমরা যাঁরা আইটি খাতের তাঁদের তো ইন্টারনেট মাস্ট। তাই তাঁদের আলাদা একটি হাব থেকে কানেকশন দেওয়া হোক।

 

ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড হোল্ডার যাঁরা আছেন, তাঁরা সেই হাব থেকে কানেকশন নেবেন এবং সেই হাব ডাউন করে দেওয়া না হয় সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।’ বর্তমানে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং, সফটওয়্যার তৈরি, ডিজাইনসহ নানামুখী কাজে যুক্ত প্রায় ছয় লাখ মানুষ। এ খাত থেকে বছরে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় কমবেশি ২০০ কোটি ডলার। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই খাতে ২০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।