ভোক্তার প্রকৃত আয় বাড়ার চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি

প্রকাশকালঃ ০১ জুন ২০২৪ ০৩:১৬ অপরাহ্ণ ৬৭৮ বার পঠিত
ভোক্তার প্রকৃত আয় বাড়ার চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি

টানা ২ বছর ধরে মানুষের আয় বাড়ার চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি বাড়ছে। এতে ভোক্তার প্রকৃত আয় কমে গেছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে ভোক্তার আয় না বাড়ার বিষয়টি ক্রমেই উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির পেটে চলে যাচ্ছে ভোক্তার আয়ের একটি অংশ।

 

২০২২ সালের এপ্রিল থেকে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির হার মানুষের আয় বাড়ার হারকে ছাড়িয়ে গেছে। মার্চ পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে মার্চে রংপুর অঞ্চলে মূল্যস্ফীতির চেয়ে ভোক্তার আয় কিছুটা বেশি বেড়েছে।

 

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ‘বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির গতিধারা’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রথমবারের মতো প্রকাশ করেছে। এখন থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।

 

প্রতিবেদনে কিছু আশার বাণীও শোনানো হয়েছে। এর মধ্যে আগামী মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে আসবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এ হার কিছুটা কমবে। একই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের হারও কিছুটা কমবে। এসবের প্রভাবে মূল্যস্ফীতির হারও কমবে।

 

এতে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে রীতিমতো কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার যুদ্ধ করছে। আগামী মাসগুলোতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে কিছুটা সুফল আসতে শুরু করবে বলে প্রতিবেদনে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে ২০২২ সাল থেকেই বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে থাকে। একই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হতে থাকে। যে ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে বৃদ্ধির হার কিছুটা কমেছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, গড় মজুরি বৃদ্ধির প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভোক্তাদের প্রকৃত আয় কমে গেছে। কারণ আয় বাড়ার চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি বেড়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে মজুরি বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে যায় মূল্যস্ফীতির হার। এতে মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

 

অব্যাহতভাবে মজুরি বাড়ার হারের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি বাড়া উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্চে রংপুর অঞ্চলে মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বেশি বেড়েছে। অন্যান্য অঞ্চলে এখনও মজুরি বাড়ার চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, আগে সাধারণত পচনশীল পণ্যের কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেশি বাড়ত না। গত বছর থেকে প্রথমবারের মতো পচনশীল পণ্যের দাম বাড়ার কারণে (বিশেষ করে শাক-সবজি, দেশীয় ফল ইত্যাদি) মূল্যস্ফীতির হারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। প্রান্তিক পর্যায় থেকে খুচরা পর্যায় পর্যন্ত ওইসব পণ্যের দাম বেশি বেড়েছে।

 

এ কারণে মূল্যস্ফীতিতে এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আমদানি খাত বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতিতে বরাবরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বাড়লে দেশের বাজারেও ওইসব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এতে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে যায়।

 

যদিও মার্চ থেকে আমদানি পণ্যের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে মূল্যস্ফীতিতে এ খাতের চাপও কিছুটা কমেছে। তবে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা বাড়তে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

 

মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি সমন্বয়ের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে মুদ্রানীতির উপকরণ রেপো রেট বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। বাজারে টাকার প্রবাহ কমানো হয়েছে।

 

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বছর জুড়েই প্রোটিন জাতীয় পণ্যে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। সবজিতে এ হার ওঠানামা করেছে। চালের মূল্যস্ফীতির হার বছরের শুরুর দিকে বেশি থাকলেও এখন তা কমতে শুরু করেছে।

 

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২২ সালের এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং মজুরি বাড়ার হার ছিল ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে মজুরি বাড়ার হার সামান্য কম ছিল। ২০২৩ সালে এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে।

 

একই সময়ে মজুরি বাড়ার হার ছিল ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে মজুরি বাড়ার হার ছিল ২ শতাংশ কম। মার্চে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। মজুরি বাড়ার হার ছিল ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। এখানে মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে মজুরি বাড়ার হার ছিল ২ শতাংশ কম।