ইসলামে সন্তানদের সমান চোখে দেখার নির্দেশ

প্রকাশকালঃ ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:২০ অপরাহ্ণ ৬১১ বার পঠিত
ইসলামে সন্তানদের সমান চোখে দেখার নির্দেশ

ন্তান-সন্ততি মানুষের জন্য মহামূল্যবান সম্পদ ও পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। সন্তানের জন্য সবচেয়ে আপন—মা-বাবা। আবার মা-বাবার জন্য সবচেয়ে আপন সন্তান। একাধিক সন্তান হলে তাদের মধ্যে কোনো প্রকার বৈষম্য না করে সমতা রক্ষা করা জরুরি।

সন্তানদের সমান চোখে না দেখলে তাদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। ফলে পারিবারিক অশান্তি বৃদ্ধি পায়। তাই পারিবারিক শান্তি ও শৃঙ্খলার স্বার্থে সন্তানদের সমান চোখে দেখা উচিত। এটিই ইসলামের নির্দেশনা।

অসিয়তের ক্ষেত্রে সমতা : সব মানুষের কম-বেশি সম্পদ থাকে। অনেকে মৃত্যুর সময় কোনো কোনো সন্তানকে বেশি ধন-সম্পদ দেওয়ার অসিয়ত করে থাকেন। এতে অন্যরা বঞ্চিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি এতটাই অন্যায়, যা জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।


আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো পুরুষ বা স্ত্রীলোক ষাট বছর ধরে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যমূলক কাজ করে। অতঃপর তাদের মৃত্যু হাজির হলে তারা অসিয়তের মাধ্যমে ক্ষতিকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ফলে তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন নির্ধারিত হয়ে যায়। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৬৭; তিরমিজি, হাদিস : ২১১৭)

ভালোবাসা প্রকাশে সমতা : ভালোবাসা ও মহব্বত অন্তরের বিষয়। তবে ভালোবাসা প্রকাশ করার পদ্ধতি মানুষের ইচ্ছাধীন। ভালোবাসা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কম-বেশি কাম্য নয়। যেমন—যার প্রতি টান বেশি, তাকে বেশি খাওয়ানো বা বেশি সময় দেওয়া। আর যার প্রতি টান কম তাকে জিজ্ঞাসাও না করা ইত্যাদি। ভালোবাসা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে এভাবে কম-বেশি করা অন্যায়। কাজেই মা-বাবার কথা ও কাজে এমন ভাব প্রকাশ পাওয়া উচিত নয়—যাতে সন্তানরা বুঝতে পারে যে মা-বাবা অমুককে বেশি ভালোবাসেন বা অমুককে কম ভালোবাসেন। জনৈক আনসারি সাহাবিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) ডাকলেন। এরই মধ্যে ওই সাহাবির এক পুত্রসন্তান তার কাছে এলো। তিনি তাকে চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন এবং কোলে বসালেন। কিছুক্ষণ পর তার এক কন্যাসন্তানও সেখানে উপস্থিত হলে তিনি তার হাত ধরে নিজের কাছে বসালেন। এটি লক্ষ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘উভয় সন্তানের প্রতি তোমার আচরণ অভিন্ন হওয়া উচিত ছিল। তোমরা নিজেদের সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করো। এমনকি চুমু দেওয়ার ক্ষেত্রেও।’ (মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৬৫০১)


দানের ক্ষেত্রে সমতা : সন্তানদের কোনো কিছু দেওয়ার ক্ষেত্রেও ইনসাফ ও সমতা রক্ষা করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হারাম। পারিবারিক জীবনে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় এটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্নেহের আতিশয্যে কোনো সন্তানের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। মা-বাবা তাদের জীবদ্দশায় সন্তানদের জায়গা-জমি দান করলে সমতা রক্ষা করা জরুরি। ছেলেকে সে পরিমাণ দেবে—যে পরিমাণ মেয়েকে দিয়েছে। ছোট সন্তানকে সে পরিমাণ দেবে—যে পরিমাণ বড় সন্তানকে দিয়েছে। তবে প্রয়োজনের বিষয়টি ভিন্ন। যেমন—কোনো সন্তানকে চিকিৎসার জন্য বা শিক্ষা-দীক্ষার জন্য বেশি অর্থ-সম্পদ ব্যয় করার প্রয়োজন হয়। এটি যৌক্তিক বিষয়। এতে কোনো গুনাহ নেই। আমের (রহ.) বলেন, আমি নুমান ইবনে বশির (রা.)-কে মিম্বরের ওপর বলতে শুনেছি—আমার পিতা আমাকে কিছু দান করেছিলেন। তখন (আমার মাতা) আমরা বিনতে রাওয়াহা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সাক্ষী রাখা ছাড়া আমি এতে সম্মত নই। তখন তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এলেন এবং বললেন, আমি আমরা বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত আমার পুত্রকে কিছু দান করেছি। হে আল্লাহর রাসুল, আপনাকে সাক্ষী রাখার জন্য সে আমাকে বলেছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সব ছেলেকেই কি এ রক

ম দিয়েছ? তিনি বলেন, না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তবে আল্লাহকে ভয় করো এবং আপন সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করো। নুমান (রা.) বলেন, অতঃপর তিনি ফিরে এসে সেই দানটি ফিরিয়ে নিলেন। (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৭)

পরিশেষে বলা যায়, শান্তিময় পারিবারিক জীবন গড়তে পরিবারে দ্বিনি পরিবেশ বজায় রাখা ও দ্বিন পালনে সচেষ্ট হওয়া জরুরি। দ্বিনি পরিবারে পারিবারিক সুসম্পর্ক, সম্প্রীতি ও আত্মিক সুখ-শান্তি বিরাজ করে। দূর হয় সব ধরনের পারিবারিক অশান্তি। কাজেই পারিবারিক শান্তি ও শৃঙ্খলার স্বার্থে ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী সন্তানদের মধ্যে বৈষম্য না করে সমতা রক্ষা করা জরুরি।