রোজা ভাঙ্গার কারন

প্রকাশকালঃ ২৮ মার্চ ২০২৩ ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ ৩৫২ বার পঠিত
রোজা ভাঙ্গার কারন

রোজা ইসলামের অন্যতম রুকন। প্রতি বছর রমজান মাসে প্রাপ্ত বয়ষ্ক সুস্থ মুসলিমের জন্য রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদাররা, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর করা হয়েছে, যাতে তোমরা খোদাভীতি অর্জন করতে পার। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

যেসব কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় 

রোজা ভঙ্গ হওয়ার কারণ দুই ধরনের। এক. রোজা ভঙ্গ হবে এবং কাজা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব। দুই. রোজা ভঙ্গ হবে এবং শুধুমাত্র কাজা আবশ্যক হবে। নিম্নে প্রথম প্রকারের কারণ উল্লেখ করা হলো :

এক: ইচ্ছাকৃত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস: রমজানে রোজা রেখে দিনে স্ত্রী সহবাস করলে বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে।

হাদীসে আছে, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর নিকট এসে বলল, আমি রোজা অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করেছি। রাসুল (সা.) তাকে কাফফারা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৬৭০৯; তিরমিজি, হাদিস নং : ৭২৪)


দুই: ইচ্ছাকৃত পানাহার: রোযা রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে। হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি রমজানে রোজা রেখে (ইচ্ছাকৃতভাবে) পানাহার করল। তখন রাসুলু (সা.) তাকে একটি দাস মুক্ত করা বা দুই মাস রোজা রাখা বা ষাটজন মিসকিনকে খাবার দেওয়ার আদেশ করলেন। (সুনানে দারাকুতনি, হাদিস নং : ২/১৯১)

ইমাম জুহরি (রহ.) বলেন, ‘রমজানে রোজা রেখে ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে এর বিধান ইচ্ছাকৃতভাবে দিনে সহবাসকারীর বিধানের মতো হবে। ’ অর্থাৎ তাকে কাজা ও কাফফারা উভয়টি আদায় করতে হবে। (মাবসুত, পৃষ্ঠা : ৩/৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৬)

তিন: ধূমপান করা: বিড়ি-সিগারেট, হুক্কা পান করলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাজা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে। (রদ্দুল মুহতার, পৃষ্ঠা : ৩/৩৮৫)

চার: সূর্যোদয়ের পর আহার: সুবহে সাদিক হয়ে গেছে জানার পরও আযান শোনা যায়নি বা এখনো ভালোভাবে আলো ছড়ায়নি এ ধরনের ভিত্তিহীন অজুহাতে খানাপিনা করলে বা স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত থাকলে কাযা-কাফফারা উভয়ই জরুরি হবে। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭; মাআরিফুল কুরআন, পৃষ্ঠা : ১/৪৫৪-৪৫৫)

উপরোল্লিখিত কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় এবং কাজা ও কাফফারা উভয়টি পালন করা ওয়াজিব।

পক্ষান্তরে যেসব কারণে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং শুধুমাত্র কাজা করা ওয়াজিব। নিম্নে তা হলো :

পাঁচ: ভুলে খাওয়া, পান করা বা স্ত্রী সহবাসের পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে খেলে বা পান করলে রোজা ভেঙে যায়। কাঁচা চাল, আটার খামির বা একত্রে অনেক লবণ খেলে রোজা ভেঙে যায়। (ফতোয়ায়ে শামি, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা ৩৭৫)


ছয়: এমন কোনো বস্তু খেলেও রোজা ভেঙে যায়, যা সাধারণত খাওয়া হয় না; যেমন—কাঠ, লোহা, কাগজ, পাথর, মাটি, কয়লা ইত্যাদি। (আলমগিরি, পৃষ্ঠা ২০২/১)

সাত : কানে বা নাকের ছিদ্রে তরল ওষুধ দিলে রোজা ভেঙে যায়। (এমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা ১২৭)

আঁট: দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে যদি তা থুতুর চেয়ে পরিমাণে বেশি হয় এবং কণ্ঠনালিতে চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যায়। (শামি, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা ৩৬৭)

নয়: মুখে পান দিয়ে ঘুমিয়ে গেলে এবং এ অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। (এমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা ১৭২)

দশ: হস্তমৈথুন করলে রোজা ভেঙে যায়। (দারুল উলুম, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা ৪১৭)


এগারো: রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় কুলি কিংবা নাকে পানি দেওয়ার সময় কণ্ঠনালিতে পানি চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। (আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা ৪৩৩)

বারো: নাকের রক্ত পেটে চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। (আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা ৪২৯)

তেরো: ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা বা বমি আসার পর তা গিলে ফেলা। (ফাতহুল কাদির, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা ৩৩৭)