আলম-গীর হোসেন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
মহামারি, অনিশ্চয়তা আর দীর্ঘদিনের ঘরবন্দি সময়ের বাস্তবতার ভেতর দিয়ে যখন দেশের অনেক তরুণ ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় ডুবে যাচ্ছিল, তখন ভিন্ন পথে হাঁটার সাহস দেখান রংপুরের কারমাইকেল কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. রাহিমুল কবির। সেই সময় থেকেই নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেন তিনি। সময়ের ব্যবধানে রাহিমুল নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন চিন্তাশীল তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে। রাহিমুলের উদ্যোগের কেন্দ্রে রয়েছে দেশীয় কৃষিপণ্য, কৃষকের পরিশ্রম এবং ভোক্তার প্রতি দায়বদ্ধতা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত উদ্যোগ ‘রিহলাতা এগ্রো’ বর্তমানে শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে খাঁটি খেজুরের গুড় নিয়ে কাজ করছে, যা তরুণদের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ তৈরি করেছে।

কৃষিনির্ভর পরিবারে বেড়ে ওঠা রাহিমুল কবির ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন মাঠে পরিবারের সদস্যদের পরিশ্রম। শীতকালে গাছির কাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহের স্মৃতি তাঁর মনে কৃষির প্রতি গভীর ভালোবাসা গড়ে তোলে। তাঁর ভাষায়, “কৃষি আমার কাছে শুধু পেশা নয়, এটা আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের জীবনেরই একটি অংশ।” এই উপলব্ধিই তাঁকে ভাবতে শেখায় গ্রামীণ অঞ্চলের খাঁটি স্বাদ ও কৃষকের পরিশ্রম কীভাবে শহরের মানুষের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়?
বাংলাদেশে শীত এলেই খেজুরের রস ও গুড় নিয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ে। তবে এর সঙ্গে বাড়ে ভেজাল ও মানহীন পণ্যের ঝুঁকিও। খাঁটি ও নিরাপদ খেজুরের গুড় পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে অনেকের জন্য। এখানেই গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে রিহলাতা এগ্রো। গাছি যে শ্রমে খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করেন, সেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে অক্ষুণ্ন রেখে রিহলাতা এগ্রোর মাধ্যমে বাজারে আনা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের খাঁটি গুড় যেমন: ফয়েল পাটালি, দানাদার গুড় ও খেজুরের বীজ গুড়।
রাহিমুল কবির জানান, তাঁদের অন্যতম নীতি হলো মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই সরাসরি গাছি ও কৃষকের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করা। এতে কৃষক ন্যায্য মূল্য পান এবং ভোক্তাও নিশ্চিত থাকেন পণ্যের স্বচ্ছতা ও বিশুদ্ধতা নিয়ে। শীতকালকে তিনি খাঁটি খেজুরের গুড় সংগ্রহের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বলে উল্লেখ করেন।
ক্যাম্পাসজীবনে অর্জিত সংগঠকসুলভ মানসিকতা ও পরিকল্পনার অভ্যাস তাঁকে পুরো কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করছে। রস সংগ্রহ, গুড় প্রস্তুত, সংরক্ষণ, প্যাকেজিং ও সরবরাহসহ প্রতিটি ধাপই তিনি নিবিড়ভাবে তত্ত্বাবধান করেন।
রাহিমুল কবির বিশ্বাস করেন, বড় উদ্যোগ মানেই বড় কারখানা বা বিশাল মূলধন নয়। নিজের চারপাশের বাস্তবতা বুঝে সেখান থেকেই উদ্যোগের শুরু হতে পারে। তাঁর ভাষায়, “আমাদের গ্রামে যে সম্পদ আছে, আমরা অনেক সময় তার মূল্য বুঝি না। অথচ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে সেটাই হতে পারে সবচেয়ে শক্তিশালী উদ্যোগ।”
বর্তমানে রিহলাতা এগ্রোর মাধ্যমে স্থানীয় কয়েকজন তরুণ-তরুণীর কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যার ফলে তারা পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি আয় করতে পারছে। নিজেদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারায় তারা যেমন আনন্দিত, তেমনি এই অভিজ্ঞতা তাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে। ভবিষ্যতে দেশীয় কৃষিপণ্য নিয়ে আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে রাহিমুল কবিরের। তবে আপাতত শীতের এই মৌসুমে রিহলাতা এগ্রোর মাধ্যমে মানুষের হাতে খাঁটি, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খেজুরের গুড় পৌঁছে দেওয়াই তাঁর প্রধান লক্ষ্য।