জনগণ রুখে দাঁড়ালেই লুটেরা চক্রের পরাজয়

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৭ আগu ২০২৫ ০৬:৩০ অপরাহ্ণ   |   ৩৬ বার পঠিত
জনগণ রুখে দাঁড়ালেই লুটেরা চক্রের পরাজয়

সিলেটে পাথর লুটপাট প্রসঙ্গে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জনগণের শক্তিই শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় যতই থাকুক না কেন, জনগণ যখন রুখে দাঁড়ায়, তখন কোনো লুটেরা চক্রই টিকে থাকতে পারে না।
 

রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
 

রিজওয়ানা হাসান জানান, পাথরের ইজারা দেওয়ার দায়িত্ব খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এবং বালুর ইজারা ভূমি মন্ত্রণালয়ের হলেও, কার্যত এসব কাজ জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। ২০১১ সালে হাইকোর্টের নির্দেশনায় জাফলংয়ের পিয়াইন ও ডাউকি নদীকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) ঘোষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়। দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০১৯ সালে সরকার তা কার্যকর করে এবং ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ওই এলাকায় পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকে।
 

তিনি বলেন, “আমি নিজেই সেই মামলার বাদী ছিলাম। পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের কারণেই সরকার ১৭টি কোয়ারি ইজারা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের ব্যর্থতা কিংবা যোগসাজশের কারণেই লুটপাট চলতে থাকে।”
 

গত এপ্রিল মাসে মাঠ পর্যবেক্ষণে গিয়ে হামলার শিকার হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা মাঠে গিয়েছিলাম এই বার্তা দিতে যে সরকার চুপচাপ বসে নেই। আপনি তো দেখেননি গত ১০-২০ বছরে কোনো মন্ত্রীকে পাথর লুটের বিরুদ্ধে সরাসরি মাঠে নামতে?”
 

তিনি অভিযোগ করেন, পাথর লুটে একটি শক্তিশালী ঐক্য গড়ে উঠেছে। প্রশাসন হয়তো তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করেছে, নয়তো নীরব থেকেছে। তবে জনগণের প্রতিবাদই লুটেরাদের চাপে ফেলেছে।
 

রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, “আজ যারা শ্রমিকদের দুঃখে দুঃখ প্রকাশ করছে, তারাই আগে ডিনামাইট মেশিনে পাথর তুলতে গিয়ে বহু শ্রমিককে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল। শুধু জাফলংয়েই ৬৫ থেকে ৮০ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছে।”
 

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, সরকারের কাজ নীতিমালা প্রণয়ন করা, আর মাঠপর্যায়ে তা কার্যকর করা প্রশাসনের দায়িত্ব। “আমরা বারবার প্রশাসনকে লিখেছি, বলেছি। তারা কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমি ও সহকর্মী ফাওজুল কবির খান সরাসরি মাঠে গিয়েছিলাম। ফিরে আসার পর আমাদের গাড়ি ঘিরে অশ্লীল বিক্ষোভ হয়েছে, রাজনৈতিক দলকেও ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। যদি তখন জনগণ প্রতিবাদ না করত, আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন হতো।”
 

তিনি বলেন, জনগণের প্রতিবাদের ফলেই লুটেরা গোষ্ঠী এখন চাপের মুখে পড়েছে। “বেটার লেট দেন নেভার—আমি জনগণকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের সোচ্চার প্রতিবাদের কারণে এখন লুটপাটের আগে লুটেরারা দুইবার ভাববে।”
 

অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হামলার ঘটনার পরপরই তিন দিনব্যাপী অভিযান চালানো হয়, সব ভাঙার মেশিনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই পরিবহন ধর্মঘট ও সর্বদলীয় চাপের কারণে আবারও পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে।
 

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, করোনা মহামারির সময়ও পাথর ব্যবসায়ীরা দুইবার ধর্মঘট ডেকেছিল। “তাদের যদি সত্যিই জনগণের জন্য মায়া থাকত, তারা তখন এমন সংকটে ধর্মঘট ডাকত না। এবারও সর্বদলীয় ঐক্যের কারণে প্রশাসন নীরব থেকেছে।”
 

শেষে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “মানুষ যখন শক্তি দেখায়, তখন লুটেরা চক্রের টিকতে পারার কোনো সুযোগ নেই। রাজনৈতিক শক্তি যতই সাপোর্ট দিক না কেন, জনগণের শক্তিই আসল বিজয়ী।”
 

রিজওয়ানা হাসান সিলেটের জাফলং ও সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমি সিলেটের মানুষ। যে জাফলং আমি দেখেছি, আজকের প্রজন্ম তা দেখেনি। আমরা চাই জাফলং আবার তার স্বাভাবিক রূপ ফিরে পাক।”