দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কুয়েত প্রবাসী বিউটি আক্তার মৃত স্বামীর ভিটে-বাড়ি ফেরত পেতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অভিযোগ করেও তিনি কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।
ফুলবাড়ী পৌরসভার মধ্য গৌড়িপাড়ার বাসিন্দা ও মৃত মোহাসিন আলীর স্ত্রী বিউটি আক্তারের দুই সন্তান রয়েছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। ২০১৮ সালে কুয়েতে মোহাসিনের মৃত্যু হলে তার মরদেহ নিয়ে দেশে ফেরেন বিউটি। স্বামীর ক্রয়কৃত বাড়িতে কিছুদিন অবস্থান করে সন্তানদের নিয়ে আবারও কুয়েতে ফিরে যান।
২০২২ সালে দেশে ফিরে বিউটি দেখেন, তার স্বামীর বড় ভাই মোবারক হোসেন ওই বাড়ি-জমি দখল করে নিয়েছেন। বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাকে বাধা দেওয়া হয়। এর ফলে তিনি আবার প্রবাসে ফিরে যান এবং সেখানে বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে অভিযোগ করেন।
গত দুই মাস আগে স্বামীর স্মৃতিচিহ্ন রক্ষায় দেশে ফিরে আসেন বিউটি। কিন্তু তিনি এখনো বাড়িতে প্রবেশ করতে পারছেন না। তার অভিযোগ, মোবারক হোসেন ও তার এক বোন সম্পত্তি আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছেন এবং তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।
বিউটি আক্তার ফুলবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা প্রশাসক এবং সেনাবাহিনীর স্থানীয় ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু জমি মাপজোক করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
মৃত মোহাসিন আলীর ছোট বোন টুনটুনি জানান, তাদের বড় ভাই মোবারক শুধু বিউটির জমি নয়, তার নিজের অংশও দখল করে রেখেছেন। মোহাসিনের আরেক ভাই মিন্টু হোসেন জানান, মোবারক শক্তি প্রয়োগ করে বাড়ি দখল করে রেখেছেন। তারা চান, মৃত ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানরা তাদের প্রাপ্য সম্পত্তি ফিরে পাক।
বিউটি আক্তার বলেন, "স্বামী হারানোর পর এখন তার শেষ স্মৃতিটুকুও হারাতে বসেছি। সব কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও কেন আমার জায়গা ফেরত পাচ্ছি না, তা বুঝতে পারছি না। আমি সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাই—স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ সম্বলটি যেন আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।"
অভিযুক্ত মোবারক হোসেন জানান, জমির বণ্টন হয়নি এবং এ নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। বিষয়টি আদালত নির্ধারণ করবে।
ফুলবাড়ী থানার ওসি একেএম খন্দকার মহিব্বুল বলেন, "বিউটি আক্তার একটি জিডি করেছেন। আমরা তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি এবং পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হতে দেব না।"
প্রবাসী বিউটির এই দুঃসহ সংগ্রামের সুরাহা কীভাবে হবে, তা এখন দেখার বিষয়।