মহানবীর সময়ের অপচয়রোধে নির্দেশনা

প্রকাশকালঃ ১১ জুলাই ২০২৩ ০৫:৩৮ অপরাহ্ণ ২০৩ বার পঠিত
মহানবীর সময়ের অপচয়রোধে নির্দেশনা

জীবনে সময়ের গণনা মাত্র। সময়ের অপচয় করার অর্থ হলো জীবন অপচয় করা। ইসলাম অন্য সব কিছুর মতো সময় অপচয় করতে নিষেধ করে। যারা সময়ের মূল্য বুঝতে না পেরে তা অপচয় করে তাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সতর্ক বাণী হচ্ছে, ‘দুটি নেয়ামত বা অনুগ্রহের ব্যাপারে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত : সুস্থতা ও অবসর।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪১২)

সময় অমূল্য সম্পদ
সময় জীবনের অমূল্য সম্পদ। রাসুলুল্লাহ (সা.) সময়কে সম্পদে রূপান্তর করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বিষয়কে পাঁচ বিষয়ের আগে মূল্য দাও : ১. মৃত্যুর আগে জীবনকে, ২. অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, ৩. ব্যস্ততার আগে অবসরকে, ৪. বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, ৫. দারিদ্র্যের আগে সচ্ছলতাকে। (সহিহুল জামে, হাদিস : ১০৭৭)

অপচয় রোধ করতে হবে কেন
চলে যাওয়া সময় কখনো ফিরে আসে না। তাই সময়ের অপচয় রোধ করা আবশ্যক। এ ছাড়া পরকালে আল্লাহ মানুষের তার জীবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগে আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে সরতে পারবে না। ১. তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? ২. তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা বিনাশ করেছে? ৩. তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে? এবং ৪. তা কী কী খাতে খরচ করেছে?  ৫. সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মোতাবেক কী কী আমল করেছে? (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৬)

সময়ের অপচয় রোধ করার উপায়
আধুনিক সময়ে যেসব কাজে সময় নষ্ট হয় সেগুলোর ব্যাপারে সচেতন হলে সময়ের অপচয় রোধ করা সম্ভব। নিম্নে এমন কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো।

১. মোবাইল ফোন : আধুনিক সমাজে মোবাইল ফোন ব্যবহারে মানুষ সবচেয়ে বেশি সময় কাটায়। সুতরাং মোবাইল ফোন ব্যবহারে সংযত হলে বহু সময় অপচয়ের হাত থেকে বেঁচে যাবে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি প্রথমে মোবাইল ফোনে ব্যয় করা সময়ের হিসাব সংরক্ষণ করবে। এরপর ক্রমন্বয়ে তা সংকোচনের চেষ্টা করবে।
মোবাইল ফোনের কাজগুলোও হিসাব করা প্রয়োজন। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় কাজগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া এবং অপ্রয়োজনীয় কাজগুলো প্রত্যাখ্যান করা।

২. ল্যাপটপ ও কম্পিউটার : মোবাইল ফোনের মতো ল্যাপটপ ও কম্পিউটারে মানুষের বহু সময় নষ্ট হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সময় অপচয় রোধে ব্যক্তি প্রতিজ্ঞা করবে, কেবল দরকারি কাজ করেই ল্যাপটপ ও কম্পিউটার বন্ধ করে দেবে। প্রয়োজনে অপচয়কৃত সময়ের বিপরীতে নিজের ওপর জরিমানা আরোপ করতে পারে।

৩. আড্ডা : গল্প ও আড্ডা সময়ের অপচয়ের অন্যতম মাধ্যম। তাই যারা জীবনে সফল হতে চায় তাদের জন্য আড্ডা এড়িয়ে চলা আবশ্যক। বিশেষত যেসব আড্ডায় পাপ কাজ হয়। বিপরীতে ব্যক্তি পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারে, নেককার আলেম ও বুজুর্গ ব্যক্তিদের সান্নিধ্য গ্রহণ করতে পারে, অংশগ্রহণ করতে পারে ধর্মীয় আলোচনা, জ্ঞানচর্চার বৈঠকগুলোতে।

৪. অপ্রয়োজনীয় কাজ : পার্থিব জীবন পরকালীন জীবনের পাথেয় সংগ্রহের ক্ষেত্র। তাই অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত হয়ে সময় অপচয়ের সুযোগ নেই। অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন কাজেও মানুষের বহু সময় নষ্ট হয়ে যায়। তাই ব্যক্তির প্রয়োজন একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করা। যাতে সে নিজের কাজগুলোর মূল্যায়ন করতে পারে।

৫. নিয়ন্ত্রণহীনতা : উল্লিখিত সব কাজ মানুষ করে যখন তার আত্মনিয়ন্ত্রণ থাকে। আত্মনিয়ন্ত্রণ না থাকলে ব্যক্তি সময়ের সঠিক মূল্য দিতে পারে না। তাই ব্যক্তির উচিত আত্মনিয়ন্ত্রণ লাভের চেষ্টা করা। আত্মসংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণ ব্যক্তির ভেতর তখনই আসবে, যখন সে আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় পাবে। আল্লাহভীতি মানুষকে যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে মুক্তি দিতে পারে।

চেষ্টাকারীই সফল হয়
সময়ের অপচয় পুরোপুরি রোধ করা কঠিন। তবে তা অসম্ভব নয়। যে চেষ্টা করে সেই সফল হয়। চেষ্টাকারীর জন্য মহান আল্লাহর সুসংবাদ হলো, ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)

আল্লাহ সবাইকে সফল করুন। আমিন