বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পুঁজি নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি

প্রকাশকালঃ ০১ জুন ২০২৪ ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ ৬৪৮ বার পঠিত
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পুঁজি নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি

 অর্থনৈতিক মন্দা ও ডলার সংকটের মধ্যেও দেশীয় উদ্যোক্তারা বিদেশে বৈদেশিক মুদ্রায় পুঁজি নেওয়ার প্রবণতা বাড়িয়েছেন।২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে মোট ৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার পুঁজি নেওয়া হয়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৩.১০% বেশি।

 

বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ২০২১ সালের তুলনায় ৬.৯% কম।বিদেশে বিনিয়োগ করা পুঁজি থেকে অর্জিত মুনাফা দেশে আনার প্রবণতাও কিছুটা বেড়েছে।২০২৩ সালে মুনাফা আনা হয়েছে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ডলার, যা ২০২২ সালের তুলনায় ২৫৬.৮% বেশি।লন্ডন, হংকং, সিঙ্গাপুর, নিউইয়র্ক, দুবাই, টরন্টোর মতো শহরগুলোতেই বেশিরভাগ বিনিয়োগ করা হয়েছে।খনিজ, রাসায়নিক ও ফার্মাসিউটিক্যালস, ট্রেডিং, টেক্সটাইল, ধাতু ও যন্ত্রপাতি, অন্যান্য উৎপাদন, সেবা খাতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে।

 

দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি নিয়ে বিনিয়োগের যে নীতিমালা করা হয়েছে তাতে শুধু রপ্তানিকারকরাই পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকের হিসাবে ডলারের পর্যাপ্ত প্রবাহ থাকতে হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে বিশেষ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিদেশে পুঁজি নিয়ে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউস খুলতে পারে।
 

 

প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশ থেকে বিদেশ পুঁজি নেওয়ার পাশাপাশি কিছু মুনাফা দেশে আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোই মুনাফা নিয়ে আসছে।

 

২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পুঁজি নেওয়া হয়েছিল ৩ কোটি ১১ লাখ ডলার। ২০২১ সালে তা তিনগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। ২০২২ সালে পুঁজি নেওয়ার পরিমাণ কিছুটা কমে। ওই বছরে নেওয়া হয়েছিল ৬ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। গত বছর নেওয়া হয়েছে ৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার। গত এক বছরের ব্যবধানে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ।

 

বিদেশে বিনিয়োগকৃত পুঁজি থেকে অর্জিত মুনাফা দেশে আনার প্রবণতাও কিছুটা বেড়েছে। ২০২২ সালে মুনাফা আনা হয়েছিল ১ কোটি ২১ লাখ ডলার। ২০২৩ সালে আনা হয়েছে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে মুনাফা আনার প্রবণতা বেড়েছে ২৫৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে বিদেশে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের পুঁজির স্থিতি কিছুটা কমেছে। ২০২২ সালে স্থিতি ছিল ৪০ কোটি ডলার বা ৪২৪০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩৮ কোটি ডলার বা ৪৪৮৪ কোটি টাকা। ওই সময়ে স্থিতি কমেছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় টাকার হিসাবে পুঁজির স্থিতি কমেনি বরং বেড়েছে।  

 

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশী বিনিয়োগ গেছে হংকংয়ে ২ কোটি ২৩ লাখ ডলার। ওই দেশ থেকে মুনাফাসহ ফিরে এসেছে ২ কোটি ৮১ লাখ ডলার। বিনিয়োগের চেয়ে মুনাফা বেশি এসেছে। ভারতে গেছে ২ কোটি ১১ লাখ ডলার বিনিয়োগ, দেশটি থেকে গত বছর আসেনি কোনো মুনাফা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছে ৮৯ লাখ ১০ হাজার ডলার। কোন মুনাফা আসেনি। যুক্তরাজ্যে গেছে ৮৮ লাখ ডলার। মুনাফাসহ ফিরেছে ১ কোটি ৩১ লাখ ২০ হাজার ডলার। নেপালে গেছে ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। মুনাফা এসেছে ৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। শীর্ষ ৫ দেশে মোট বিনিয়োগ ৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। মুনাফা এসেছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ডলার।্ অন্যান্য দেশে গেছে ৭৯ লাখ ১০ হাজার ডলার। মুনাফা এসেছে ১৪ লাখ ডলার।

 

২০২৩ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় বিদেশে সবচেয়ে বেশি পুঁজি গেছে ৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার। এর মধ্যে দেশে এসেছে ৪ কোটি ৩২ লাখ ডলার। বিনিয়োগের মধ্যে খনিজ খাতে গেছে ৮৯ লাখ ডলার, রাসায়নিক ও ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে ৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার, ট্রেডিং খাতে ৪ লাখ ২০ হাজার ডলার, ট্রেক্সটাইল খাতে ২ লাখ ৩০ হাজার ডলার, ধাতব ও মেশিনারিজ খাতে ২ লাখ ডলার, অন্যান্য উৎপাদন খাতে ৮০ হাজার ডলার, সেবা খাতে ৭০ হাজার ডলার।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশে বিনিয়োগ নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ খুব সাবধানে এগুচ্ছে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সরকার ১৯৪৭ সালের আইন সংশোধন করে একটি শর্ত যোগ করে বিদেশে বিনিয়োগ নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। কেবল রপ্তানি আয়ের বিপরীতে পর্যাপ্ত ডলারের প্রবাহ থাকলেই বিদেশে বিনিয়োগ নেওয়া যাবে। বর্তমানে ওই আইনের আওতায় ২২টির বেশি দেশে বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগ গেছে।

 

এ পর্যন্ত ১৮টি কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করছে।