জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া এই মামলায় মিজানুর রহমানের স্ত্রী, ভাই ও ভাগনেকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম গতকাল বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী জাহিদুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রায় ঘোষণার আগে মিজানকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
দণ্ডিত ব্যক্তিদের মধ্যে মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার (রত্না) পলাতক। মিজানের ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান এবং ভাগনে মাহমুদুল হাসানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা জামিনে ছিলেন।
রায়ে আদালত বলেন, মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। দণ্ডিত আসামি মিজানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় মিজানকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার আরেকটি আদালত।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৪ জুন মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।
মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। দুদকের পক্ষ থেকে ২৭ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।
মামলার বাদী দুদক পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ আদালতকে বলেছিলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মিজানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর তাঁকে সম্পদের হিসাব দিতে নোটিশ দেওয়া হয়। পরে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট তিনি দুদকে সম্পদের হিসাব জমা দেন। সেখানে তিনি মোট ১ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ২৬০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৪৬ লাখ ২৬ হাজার ৭৫২ টাকার অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেখান।
মঞ্জুর মোর্শেদ আদালতকে আরও বলেন, অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ডিআইজি মিজান অবৈধ অর্থ দিয়ে নিকটাত্মীয়দের নামে সম্পদ কিনে তা কৌশলে ভোগদখল করেন। মিজান তাঁর ভাগনে মাহমুদুল হাসানের নামে ২০০২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ২৪ লাখ ২১ হাজার ২২৫ টাকা দিয়ে গুলশান-১-এর পুলিশ প্লাজা কনকর্ডে একটি দোকান বরাদ্দ নেন। ওই দোকান তাঁর স্ত্রীর নামে ভাড়া নিয়ে নিজের দখলে রাখেন।
এ ছাড়া মাহমুদুলের নামে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখায় একটি স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) হিসাব খোলেন। সেখানে ৩০ লাখ টাকা জমা রাখেন তিনি।
দুদক অনুসন্ধান শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই মিজান সেই টাকা তুলে নেন জানিয়ে মঞ্জুর মোর্শেদ আদালতকে বলেন, সুদসহ টাকার পরিমাণ ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫৭ টাকা, যা তিনি তাঁর সম্পদের বিবরণীতে জমা দেননি।
এ ছাড়া মিজান তাঁর ভাই মাহবুবুর রহমানের নামে ২০১৬ সালের ২১ মার্চ ৬৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১৯ টাকা দিয়ে রাজধানীর বেইলি রোডে একটি ফ্ল্যাট কেনেন। মাহবুবুরের ফ্ল্যাট কেনার বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। ওই ফ্ল্যাটও মিজানের দখলে আছে।
মিজান ২০১১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্ত্রীর নামে একটি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট কেনেন, যার দাম ১ কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫০ টাকা। এভাবে আসামি মিজান অপরাধলব্ধ অর্থ দিয়ে নিজের আত্মীয়স্বজনের নামে সম্পদ কিনেছেন, যে তথ্য তিনি গোপন করেছেন বলে আদালতকে জানান মামলার বাদী মঞ্জুর মোর্শেদ।