নরসিংদীর গর্ব বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ৫৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২০ আগu ২০২৫ ০৪:৫২ অপরাহ্ণ   |   ৩৫ বার পঠিত
নরসিংদীর গর্ব বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ৫৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী

সাদ্দাম উদ্দিন রাজ,নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি:-

 

আজ ২০ আগস্ট—নরসিংদী জেলার গৌরব, মহান মুক্তিযুদ্ধের অমর বীরসন্তান, বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী।
 

১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার আগা সাদেক রোডের ১০৯ নম্বর ‘মোবারক লজ’-এ জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পৈতৃক ভিটা ছিল নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার রামনগর গ্রামে, যা বর্তমানে মতিননগর নামে পরিচিত। নয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ। তাঁর বাবা মৌলভী আব্দুস সামাদ এবং মা সৈয়দা মোবারকুন্নেসা খাতুন।
 

শিক্ষাজীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পাসের পর পাকিস্তানের সারগোদা বিমানবাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। মেট্রিক পরীক্ষায় ডিস্টিংকশনসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৬১ সালে যোগ দেন পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে। ১৯৬৩ সালে রিসালপুর পিএএফ কলেজ থেকে পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন।
 

এরপর করাচির মৌরিপুর (বর্তমান মাসরুর) এয়ারবেসে ২ নম্বর স্কোয়াড্রনে জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেখানে তিনি টি-৩৩ জেট বিমানের ওপর কনভার্সন কোর্স সম্পন্ন করেন।
 

১৯৭১ সালের এই দিনে, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সেফটি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি করাচির মাসরুর বিমানঘাঁটি থেকে একটি টি-৩৩ প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল বিমানটি মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার করা। এজন্য তিনি প্রশিক্ষণার্থী পাইলট রশিদ মিনহাজকে অজ্ঞান করে ফ্লাইট শুরু করেন। কিন্তু মিনহাজ জ্ঞান ফিরে পেলে বিমানের ভেতরে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। একপর্যায়ে বিমানটি ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে থাট্টা এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় মতিউর রহমান শহীদ হন। তাঁর দেহ বিমান থেকে প্রায় আধ মাইল দূরে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়।
 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহস ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে সর্বোচ্চ বীরত্বসূচক খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
 

শহীদ হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার তাঁর মরদেহ করাচির মাসরুর বেসের চতুর্থ শ্রেণির কবরস্থানে দাফন করে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০০৬ সালের ২৪ জুন তাঁর দেহাবশেষ বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। পরদিন, ২৫ জুন পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে রাজধানীর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুনরায় দাফন করা হয়।
 

বাংলার আকাশ চিরকাল স্মরণ করবে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের সাহস, আত্মত্যাগ আর দেশপ্রেমকে।