রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা–মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় পলাতক গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি থেকে তাকে আটক করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের একটি দল। থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চার দিন কাজের পরই হত্যাকাণ্ড
সোমবার সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় বোরকা পরে ঢোকে গৃহকর্মী আয়েশা। কিছুক্ষণ পরই বাসায় থাকা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)–কে হত্যা করে তিনি। পরে নিহত নাফিসার স্কুলড্রেস ও মাস্ক পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান।
পুলিশ জানায়, মাত্র চার দিন আগে আয়েশা নামের পরিচয়ে ওই বাসায় কাজ নেন তিনি। নাফিসা ছিলেন মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা এম জেড আজিজুল ইসলাম উত্তরা সানবীমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক।
সিসিটিভিতে ধরা পড়ে পুরো ঘটনা
ভবনের সিসিটিভি বিশ্লেষণে দেখা যায়, সকাল ৭টার দিকে নাফিসার বাবা বাসা থেকে বের হন। ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরা আয়েশা ভবনে ঢোকে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে বের হয়ে যায়।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় ফিরে স্ত্রী ও মেয়ের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান আজিজুল ইসলাম।
প্রাথমিক তদন্তে যা জানা গেছে
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, লায়লা আফরোজকে হত্যার পর ঘটনাটি টের পেয়ে মেয়ে নাফিসা ডাইনিং রুমের ইন্টারকম থেকে ফোন করার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হলে তাকেও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ধস্তাধস্তির সময় ইন্টারকমের লাইন খুলে যায়।
তল্লাশিতে বাসার বাথরুম থেকে একটি সুইচ গিয়ার চাকু ও একটি ফল কাটার ছুরি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো দিয়েই মা–মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর ভবনের দারোয়ান মালেককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
পরিবারের বর্ণনা
আজিজুল ইসলাম জানান, চার দিন আগে বোরকা পরা এক তরুণী কাজের সন্ধানে আসে। দারোয়ান তাকে বাসায় পাঠান। স্ত্রী ও মেয়ে কথা বলে তাকে কাজে রাখেন।
তিনি বলেন, “মেয়েটা নিজেকে রংপুরের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেয়। জানায়, বাবা–মা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। তার শরীরেও পোড়ার দাগ আছে। প্রথম কয়েকদিন ঠিকঠাক কাজেও আসে।”
ঘটনাস্থলে ধস্তাধস্তির চিহ্ন
ঘটনার পর ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, দরজা থেকে শুরু করে ঘরের বিভিন্ন স্থানে রক্তের দাগ। আলমারি, ভ্যানিটি ব্যাগ তছনছ অবস্থায়। বাসার একাধিক জিনিসপত্র এলোমেলো। লায়লা আফরোজের মোবাইল ফোনও পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য কিছু খোয়া গেছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, আয়েশাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের কারণ ও উদ্দেশ্য উদ্ঘাটনে তদন্ত চলছে।