আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় একটি ইউনিয়নে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে (১২) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বোরহান উদ্দিন রব্বানি (৬১) নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এতে ওই শিক্ষার্থী চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে বলে চিকিৎসকের বরাতে দাবি করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। শিশু বয়সেই গর্ভে আরেক শিশু বহন করে জীবন সংকটে দিন কাটছে ওই শিক্ষার্থীর।
ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পরও দরিদ্রতা ও অসহায়ত্বের কারণে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেনি ভুক্তভোগীর পরিবার। এলাকার প্রভাবশালীদের কাছে বিচারের ভার দিলে গ্রাম্য সালিশ করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় শিশুটির স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়েছে।
এদিকে ঘটনা প্রকাশের পর অভিযুক্ত বোরহান উদ্দিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকালে উপজেলার নেওয়াশী বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, বোরহান উদ্দিনের বাড়িতে ওই শিক্ষার্থী এবং তার মা জীবিকার তাগিদে মাঝে মধ্যে কাজ করতে যেতেন। চার মাস আগে অভিযুক্ত বোরহান উদ্দিনের স্ত্রী বাড়িতে না থাকার সুযোগে ওই শিক্ষার্থীকে বাড়িতে ডেকে নেন। পরে তাকে ঘরে নিয়ে বল প্রয়োগ করে ধর্ষণ করে বোরহান।
ওই গ্রামের যুবক মেহেদী বলেন, ‘শিশুটির শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন দেখে তার মা বিষয়টি জানতে পারেন। পরে বোরহান ধর্ষণের দায় স্বীকার করছে। এলাকায় সালিশ হওয়ার কথা। আমরা চাই ওই শিক্ষার্থী যেন বিচার পায়।’
ভুক্তভোগীর মা বলেন, ‘তাকে জিজ্ঞাসা করলেও ভয়ে স্বীকার করেনি। প্রতিবেশী এক ভাবির পরামর্শে কাঠি ( প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট) এতে পরীক্ষা করলে মাথায় বাজ ভাঙ্গি পড়ে। তখন মেয়েকে ধমক দিয়ে জিজ্ঞাসার করলে বোরহানের নাম বলছে। বোরহান ধর্ষণের কথা স্বীকার করছে।’
ভুক্তভোগীর মা আরও বলেন, ‘এরপর মেয়ের দাদি, বোরহানের এক শ্যালিকাসহ কয়েকজন মিলে মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তার আল্ট্রাসনো করে বলে মেয়ে চার মাস এক দিনের গর্ভবতী।’
‘আমরা থানায় যাইতে পারি নাই। এলাকায় বিচার দিছি। কিন্তু আইজ বসি কাইল বসি করিও বিচার হচ্ছে না। আমরা গরিব মানুষ। এই বাচ্চা মেয়েটাকে নিয়া এখন কী করবো, কার কাছে যাবো। আমরা বিহিত চাই, বিচার চাই,’ অভিযুক্ত বোরহানের বিচার চেয়ে আকুতি জানান শিশুটির মা।
অভিযুক্ত বোরহান উদ্দিন বর্তমানে বাড়ি ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে। যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে বা তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। ফলে এ নিয়ে অভিযুক্তের পক্ষে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভাঙামোড় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) শুভাংশু চন্দ্র রায় বলেন, ‘মেয়েটা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সে তার প্রতিবেশী বোরহান উদ্দিনের নাম বলেছে। বোরহানের সঙ্গে কথা বলতে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। সে নাই, তার বাড়িতে তালা ঝুলছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে বোরহানই এ ঘটনার জন্য দায়ী। কয়েকজনের কাছে নাকি স্বীকারও করেছে। এ নিয়ে এলাকায় সালিশ হওয়ার কথা রয়েছে।’
ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুস সালাম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত নই। খোঁজ নিচ্ছি। ওই পরিবারকে প্রয়োজনীয় সব আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।’