অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন। মিজানুর রহমান খান যশোর চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি জানিয়েছেন আগামী বাজেটে তাঁর প্রত্যাশার কথা।
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে প্রতিবছর অন্তত সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে। কিন্তু যশোরের বাণিজ্য বিকাশে জাতীয় বাজেটে তেমন কোনো বরাদ্দ রাখা হয় না। অথচ যশোর হতে পারে দেশের তৃতীয় বাণিজ্যিক রাজধানী। স্থল, নৌ, বিমান—একই সঙ্গে তিনটি বন্দর রয়েছে যশোরে। এ ছাড়া আকাশ, সড়ক, নৌ ও রেল—এই চার ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে সারা দেশের সঙ্গে। এদিক থেকে যশোরের সঙ্গে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের হাতছানি আছে। এ বিষয়ে মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
কলকাতা নৌবন্দরের সঙ্গে যশোরের নওয়াপাড়া নৌবন্দরের যোগাযোগ স্থাপন করার সুযোগ রয়েছে। পদ্মা নদীর সঙ্গে চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা এলাকায় ভৈরব নদের সংযোগ স্থাপন করে দিলেই কলকাতার নৌযান যশোরের নওয়াপাড়া বন্দরে ভিড়তে পারে। ফলে কম খরচে নৌপথে পণ্য পরিবহন করা যাবে। এ জন্য নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী ভৈরব নদের ওপর নির্মিত ব্রিজ-কালভার্ট অপসারণ করে যথাযথ মানের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ এখনই নিতে হবে। একই সঙ্গে নৌপথ সংস্কার করতে হবে। আসন্ন বাজেটেই এ বিষয়ে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
সম্প্রতি ভারত থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে রেলের মাধ্যমে কনটেইনারে পণ্য আসা শুরু হয়েছে। এর পূর্ণাঙ্গ সুফল পেতে যশোরের সিঙ্গিয়া এলাকায় প্রস্তাবিত কনটেইনার টার্মিনাল স্থাপন করা জরুরি। সিঙ্গিয়া এলাকার সঙ্গে যশোরের প্রস্তাবিত ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের দূরত্ব ৫ থেকে ১০ কিলোমটার। এ ছাড়া ভৌগোলিক দিক দিয়ে বেনাপোল, দর্শনা ও ভোমরা স্থলবন্দর এবং মংলা নৌবন্দরের মধ্যবর্তী স্থানে সিঙ্গিয়া এলাকা। এর সঙ্গে যুক্ত আছে পদ্মা সেতু। ফলে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগও খুব সহজ হবে।
যশোরে কনটেইনার টার্মিনাল পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতিতে নির্মিত হতে পারে। আবার সরকার নিজেও তা নির্মাণ করতে পারে। মূল কথা হলো, এই টার্মিনাল হলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি বিকশিত হবে। কনটেইনার টার্মিনাল স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে শুল্কায়ন ব্যবস্থা আরও সহজ করতে হবে। পণ্য বন্দরে না নামিয়ে কনটেইনারে রেখেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই–বাছাইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে কম খরচে ও কম সময়ে পণ্য খালাস হবে। ফলে বন্দর থেকে পণ্য চুরি ও নষ্ট হওয়ার শঙ্কাও আর থাকবে না।
আসন্ন বাজেটে যশোর অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকলকারখানা স্থাপনে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বিসিকের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে ছোট ছোট শিল্প গড়ে তুলতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে বিসিকের ইউনিট চালু করা এখন সময়ের দাবি। তরুণেরা উদ্যোক্তা হতে চান।
কিন্তু ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ, শ্রম অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরের ছাড়পত্র ও বিদ্যুতের সংযোগ নিতে তাঁদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। সে জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে শিল্প স্থাপনের ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব সনদ বা ছাড়পত্র এক ছাতার নিচ থেকে সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকতে হবে। চলতি বাজেটেই এ বিষয়ে বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।