স্ট্রোক মূলত মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত হানে। মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে কোষগুলো মরে গেলে স্ট্রোক হয়। জীবনযাপনে সামান্য একটু পরিবর্তন আনলেই এ ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। আমাদের জীবনে ব্রেইন স্ট্রোক একটি মারাত্মক রোগ। স্ট্রোক হলে একদিকে রোগী ও তার স্বজনের মাঝে থাকে মৃত্যুর বিভীষিকা। যাদের মৃত্যু না হয় তাদের প্যারালাইসিস হবার মতো একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা বিরাজ করে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষের জীবনে খাদ্যাভ্যাসের নিয়ন্ত্রণ ও কর্মক্ষমতার নিয়মিত সঠিক পরিচর্যা না করলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। গবেষণায় উঠে এসেছে, আমেরিকার মতো জায়গায় বছরে অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ স্ট্রোকে মারা যান। আর প্রতি বছর ৭ লাখ ৯৫ হাজার স্ট্রোক রোগে আক্রান্ত হন। বাংলাদেশেও দিন দিন বাড়ছে এই রোগ ও এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা। তাই হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে জেনে আগেই সচেতন হবার পরামর্শ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।
স্ট্রোক বর্তমান বিশ্বে স্ট্রোক মানুষের মৃত্যুর চতুর্থ কারণ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। এ রোগে মস্তিষ্কের অংশবিশেষ নষ্ট হওয়ায় রোগীর দেহে বেশ কিছু শারীরিক অক্ষমতা দেখা দেয়। যেগুলোকে স্ট্রোকের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন: প্যারালাইসিস, পা, হাত, মুখ অথবা শরীরের ডান বা বাম অংশ অবশ হয়ে যাওয়া। কথা বলতে বা কথা বুঝতে সমস্যা হওয়া, বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পতিত হওয়া, কথা জড়িয়ে আসা, একটা চোখে অথবা উভয় চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া, অথবা ঝাপসা দেখা, চলাফেরা করতে না পারা, চলাফেরায় ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রমে অসামঞ্জস্য দেখা দেওয়া, হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা দেখা দেওয়া।
প্রাথমিক অবস্থায় কারও স্ট্রোক দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত তা না হলে রোগীর মস্তিষ্কের বেশি অংশ নষ্ট হয়ে জটিল আকার ধারণ করতে পারে অথবা রোগীর দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা বা মৃত্যু ঘটতে পারে। আমাদের প্রতিদিনের কিছু অভ্যাস রয়েছে যা হতে পারে স্ট্রোকের কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ট্রোক আমাদের জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস যদি সঠিক থাকে, তাহলে অনেক অসুখই প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। জেনে রাখা ভালো, কোন কোন জীবনধারা অনিয়মের কারণে স্ট্রোকের সমস্যা দেখা দেয়।
ফ্যাটজাতীয় খাবার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাটজাতীয় খাবার থাকলে তা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। প্যাকেটজাত ও প্যাকেটজাত খাবারেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লবণ এবং নাইট্রেট প্রিজারভেটিভ থাকে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। খাবারে একাধিক মাত্রায় লবণের ব্যবহারও রক্তচাপ বাড়িয়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় বলে বিশেষজ্ঞরা বলেন।
শরীরচর্চার অভাব শরীরচর্চা না করলে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে শরীরে। যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটি, উচ্চ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসের মতো সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। তার ফলেই স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা এ কারণেই অতি ব্যস্ত থাকার মাঝেও নিয়মিত শরীরচর্চা করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
মেদ জমলে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমলেই তাকে ওবেসিটির সমস্যা বলা হয়। ওবেসিটি হলে শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়ে। এছাড়া ওবেসিটির ফলে ডায়াবেটিস রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। এতে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
মদ্যপান অত্যধিক মাত্রায় মদ্যপান স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় বলে বক্তব্য বিশেষজ্ঞদের। অতিরিক্ত মদ্যপান অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের অন্যতম কারণ। অ্যালকোহল শিরা ও ধমনীর স্থিতিস্থাপকতাকে মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। যা স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ।
ধূমপান অ্যালকোহলের মতো ধূমপানও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান হৃদপিণ্ডের যেমন ক্ষতি করে তেমনি রক্তচাপেও প্রভাব ফেলে। ধূমপানের ফলে শরীরে অসংখ্য ক্ষতিকর পদার্থ প্রবেশ করে। এমনকি, পরোক্ষ ধূমপানেও প্রবল ক্ষতি হয় শরীরের। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। ফলে ফুসফুসের পাশাপাশি ক্ষতি হয় সংবহনতন্ত্রেরও।
শারীরিক পরিশ্রম যাদের শারীরিক পরিশ্রম কম বা যারা প্রতিদিন কাজ করে না তাদেরও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। দিনের অধিকাংশ সময় বসে থাকা, স্থূলতা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এমন জীবনযাত্রার কারণে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে ভবিষ্যতে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।