যুক্তফ্রন্টের আদলে বামপন্থিদের নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:০৬ অপরাহ্ণ   |   ৯২ বার পঠিত
যুক্তফ্রন্টের আদলে বামপন্থিদের নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ

ঢাকা প্রেস-নিউজ ডেস্ক:-

 

আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব আসনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বামপন্থিরা যুক্তফ্রন্টের আদলে একটি নতুন বৃহত্তর জোট গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই উদ্যোগের নেতৃত্বে রয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট, যেখানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)সহ ছয়টি দল দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য বাম ও প্রগতিশীল শক্তির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। শিগগিরই বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
 

জোটের নেতারা জানিয়েছেন, জোট গঠনের বিষয়ে সকলের মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হলেও এখনো নতুন জোটের নাম নির্ধারিত হয়নি। কেউ কেউ ‘নয়া যুক্তফ্রন্ট’ বা ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’ নাম প্রস্তাব করেছেন। তবে তারা মনে করছেন, ১৯৫৪ সালের ঐতিহাসিক যুক্তফ্রন্টের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়ায়, নাম ও কাঠামো চূড়ান্ত করতে সব পক্ষের মতামত নেয়া হবে। বৃহত্তর ঐক্যের ব্যানারে আগামী নির্বাচনে একযোগে অংশগ্রহণে সবাই প্রায় একমত।
 

বামপন্থিদের লক্ষ্য হলো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বিদলীয় এবং বুর্জোয়া রাজনৈতিক ধারার বাইরে বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর এই উদ্যোগ আরও জোরদার হয়েছে বলে জানান তারা।
 

বাম নেতারা আরও বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন পতনের পরও কাঙ্ক্ষিত ব্যবস্থার পরিবর্তন আসেনি। সেই পরিবর্তনের সংগ্রাম এগিয়ে নিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাম প্রগতিশীল দল, শক্তি ও সংগঠনগুলোর বৃহত্তর ঐক্য গড়ার প্রয়োজন রয়েছে।
 

সূত্র মতে, ইতোমধ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোট ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, জাতীয় গণফ্রন্ট, ঐক্য ন্যাপসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সংগঠন, এবং গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।
 

ঈদুল ফিতরের আগে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বাসায় একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে আলোচনা হয়। গণফোরামকে জোটে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়েও আগে থেকেই আলোচনা চলছিল।
 

এছাড়া নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক এবং গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকির সঙ্গেও বাম জোটের নেতারা আলাপ করেছেন। তারা বৃহত্তর ঐক্যের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও দাবি করা হয়।
 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগে থেকেই বাম গণতান্ত্রিক জোট ও অন্যান্য বামপন্থি জোট যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। বিশেষ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা এবং বাংলাদেশ জাসদ একাধিক যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে। ৫ আগস্টের পর ঐক্যের প্রয়াস আরও গতি পায়।
 

গত ৩ জানুয়ারি সিপিবির ঢাকা সমাবেশ এবং ১০ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে বৃহত্তর জোট গঠনের কাজ এগিয়ে চলে। ২১ জানুয়ারি বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার বৈঠকও হয়। পাশাপাশি টেলিফোন ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠকেও আলাপ চলেছে।
 

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে বাম প্রগতিশীলদের বৃহত্তর ঐক্য অত্যন্ত জরুরি। তিনি জানান, আগস্ট অভ্যুত্থানের পর এই প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়েছে।
 

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, "দ্বিদলীয় মেরুকরণের বাইরে বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। খুব শিগগিরই দেশবাসীর সামনে আমরা সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নিয়ে হাজির হব।" তিনি আরও জানান, ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
 

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, "শাসকশ্রেণির বিকল্প একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।" তিনি জানান, ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে বাম প্রগতিশীল দল ও শক্তিগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে।