ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
সুঁই সুতোর ফোড়ে কেউ ফুটিয়ে তুলছেন ফুলের আকৃতি। আবার কেউ বা করছেন রংয়ের কাজ, কেউ আবার লাল সাদা কাপড়ের উপর ফুটিয়ে তুলছেন বিভিন্ন ধরনের নকশা। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের নারীদের হাতে ফুটিয়ে তোলা এমন দৃশ্য দেখা গেছে কুড়িগ্রামের নারী উদ্যোক্তা রাজিয়া সুলতানার বাড়িতে।
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের বাসিন্দা রাজিয়া। জীবন-জীবিকার তাগিদে নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর সুঁই-সুতার বুননের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে একজন স্বাবলম্বী নারী তিনি। যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে হাতেখড়ি নিয়ে হস্তশিল্পে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এলাকার গণ্ডি পেরিয়ে এখন ছড়িয়ে দিচ্ছেন সারা দেশে। এই এলাকার অর্ধশতাধিক নারী এখন বর্ধণমূলক এ কাজ করে সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। রাজিয়া উপজেলার প্রথম সারির একজন নারী উদ্যোক্তা, যিনি নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজ এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছেন।
২০২৩ সালের জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে হস্তশিল্পের উপর এক মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ বাড়িতেই ব্লক বাটিক, হ্যান্ড পেইন্টিং ও সেলাইয়ের কাজ শুরু করে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পেয়ে যান সাফল্যতা, নিজের সফলতার পর এলাকার বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টির লক্ষ্যে নিজ উদ্যোগে গ্রামের ৫০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেন উদ্যোক্তা রাজিয়া সুলতানা। দোকান থেকে কাপড়, রং ও মেডিসিন ক্রয় করে গ্রামের বেকার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীদের দিয়ে ব্লক বাটিক, হ্যান্ড পেইন্টিং ও সেলাইয়ের মাধ্যমে তৈরি করছেন থ্রি পিস, চাদর, বেডশীট, পাঞ্জাবি ও শাড়ি সহ অনেক কিছু। তাদের তৈরিকৃত কাপড় লাভজনক দামে বিক্রি হচ্ছে অনলাইন ও অফলাইনে। এতে করে মজুরি হিসেবে যা পাচ্ছেন তা দিয়ে সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে গ্রামের বেকার সেই নারীদের। গ্রামের নারীদের কাজের পারিশ্রমিক মিটিয়ে বছরে লাখ টাকারও বেশি আয় করছেন নারী উদ্যোক্তা রাজিয়া সুলতানা।
রাজিয়া সুলতানার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া লুনা, শাহনাজ পারভীন আর হ্যাপি নামের তিন নারী বলেন, আমাদের মত গ্রামের মেয়েরা নিজেরা স্বাচ্ছন্দে আয় ইনকাম করতে পারবো, সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে পারবো কখনো বিশ্বাস করিনি। রাজিয়া আপার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্লক বাটিক, হ্যান্ড পেইন্টিং ও সেলাইয়ের কাজ করে আমাদের সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
নারী উদ্যোক্তা রাজিয়া সুলতানা জানান, জেলা যুব উন্নয়ন থেকে এক মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আমার নিজ বাড়িতে ব্লক বাটিক, হ্যান্ড পেইন্টিং ও সেলাইয়ের কাজের সফলতা অর্জন করার পর, আমি আমার গ্রামের নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করি। এখন আমার বাসায় ৫০ জন বেকার নারীরা কাজ করে তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে। এখান থেকে প্রতিবছরে আমার এক লাখ টাকার বেশি আয় হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, শুধু আমার গ্রামে নয় পুরো উপজেলার বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ললিত মোহন রায় জানান, যুব উন্নয়ন থেকে আমাদের ফুলবাড়ী উপজেলার রাজিয়া সুলতানা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সফল উদ্যোক্তা হয়ে বেকার নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন, সেই সাথে তিনি বছরে এক লাখেরও বেশি টাকা আয় করছেন, আমি সেই উদ্যোক্তার সফলতা কামনা করছি।