স্বাক্ষর জাল ক‌রে কর্মচারী নি‌য়োগের চেষ্টায় প্রধান শিক্ষ‌কের ক‌ক্ষে তালা

প্রকাশকালঃ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০৪ অপরাহ্ণ ৫৯৮ বার পঠিত
স্বাক্ষর জাল ক‌রে কর্মচারী নি‌য়োগের চেষ্টায় প্রধান শিক্ষ‌কের ক‌ক্ষে তালা

ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

 

 

কু‌ড়িগ্রামের চিলমারীতে সভাপ‌তির স্বাক্ষর জাল করে নি‌য়োগসহ নানা অ‌নিয়ম-দুর্নী‌তির অ‌ভি‌যো‌গে প্রধান শিক্ষ‌কের ক‌ক্ষে তালা দি‌য়ে‌ছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় এলাকাবাসী বি‌ক্ষোভ কর‌তে থাক‌লে ত‌ড়িঘ‌ড়ি ক‌রে বিদ‌্যালয় ছু‌টি দি‌য়ে গা ঢাকা দেন ওই শিক্ষক। মঙ্গলবার (২৪ সে‌প্টেম্বর) বেলা ১১ টার দি‌কে উপ‌জেলার রা‌ণিগঞ্জ ইউয়ি‌নের কয়ারপাড় বীর বিক্রম উচ্চ বিদ‌্যালয়ে এ ঘটনা ঘ‌টে।

 

 

জানা গে‌ছে, ২০১৫ সা‌লের ৬ অ‌ক্টোবর কয়ারপাড় বীর বিক্রম উচ্চ বিদ‌্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হি‌সে‌বে যোগদান ক‌রেন আমিনুল ইসলাম। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লী‌গের ছত্রছায়ায় যোগদা‌নের পর থে‌কে নানা অ‌নিয়ম দু‌র্নী‌তি‌তে জ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়েন তি‌নি। গত নয় বছর ধ‌রে বিদ‌্যাল‌য়ের টিউশন ফিসহ শিক্ষার্থী‌দের কাছ থে‌কে বাড়‌তি অর্থ আদায় ক‌রে নি‌জের খেয়ালখু‌শি ম‌তো বিদ‌্যালয় প‌রিচালনা ক‌রে আস‌ছেন। প্রধান শিক্ষক এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় ভ‌য়ে কেউ মুখ খো‌লেন‌নি। প্রভাব খা‌টি‌য়ে ওই প্রতিষ্ঠা‌নে এমএলএসএস, প‌রিচ্ছন্নকর্মী, আয়া ও ল‌্যাবসহকারী প‌দে নি‌য়োগ বা‌ণিজ‌্য ক‌রেন। একই প‌দে একা‌ধিক ব‌্যা‌ক্তির কা‌ছে মোটা অং‌কের উৎ‌কোচ গ্রহণ ক‌রেন। সভাপতি আব্দুল ক‌রিম মিয়ার স্বাক্ষর জাল ক‌রে গোপ‌নে এসব নি‌য়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন ক‌রেন ব‌লে প্রধান শিক্ষ‌কের বিরু‌দ্ধে অ‌ভি‌যোগ র‌য়ে‌ছে।

 

এমএলএসএস প‌দে আনিছুর রহমান, পরিচ্ছন্ন কর্মী আতাউর রহমান, ল্যাব সহকারী নাজমুল হক ও আয়া প‌দে লুচী খাতুনকে নি‌য়োগ দেওয়া হ‌লে বিক্ষুব্ধ হন অন‌্য প্রার্থীরা। বিষয়‌টি জানাজা‌নি হ‌লে আব্দুল ক‌রিম‌ মিয়ার স্বাক্ষর জাল ক‌রে চার প‌দে নি‌য়ো‌গের প্রতিবা‌দে বি‌ভিন্ন দপ্ত‌রে লি‌খিত অ‌ভি‌যোগ ক‌রেন।

 

মঙ্গলবার ওই চার প‌দে নি‌য়োগপত্র প্রদান ক‌রে হ‌বে এমন খবর ছ‌ড়ি‌য়ে পড়‌লে বিক্ষুব্ধ জনতা বিদ‌্যা‌লয়ের জ‌ড়ো হ‌তে থা‌কে। বিষয়‌টি বেগ‌তিক দেখে চতুর প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম সটকে প‌ড়েন। প‌রে তাৎক্ষ‌ণিক স্কুল ছু‌টি ঘোষণা দেওয়া হলে প্রধান শিক্ষ‌কের ক‌ক্ষে তালা দেন বিক্ষুব্ধরা।

 

নাম প্রকাশ না জথ শ‌র্তে দুই জন শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম যোগদা‌নের পর থে‌কে টিউশন একায় আত্মসাৎ ক‌রে আস‌ছেন। তার খেয়ালখু‌শি ম‌তো স্কুল প‌রিচালনা ক‌রেন। নানা কার‌ণে তার ম‌তের বা‌হি‌রে কথা বল‌তে পা‌রি না।

 

সভাপ‌তি আব্দুল ক‌রিম মিয়া ব‌লেন, চল‌তি বছ‌রের প‌হেলা এপ্রিল আমাদের ক‌মি‌টি বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু এর আগে আমি সভাপতি পদে দায়িত্ব পালনকালে এই প্রতিষ্ঠানে কোনো পদে নিয়োগ বোড অনুষ্ঠিত হয় নাই। আমি কোনো নিয়োগ বোডে উপস্থিত ছিলাম না এবং কোথাও স্বাক্ষরও করি নাই। বিশ্বস্থ সূত্রে জানতে পারছি প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম আমার স্বাক্ষর জাল করে চার‌টি প‌দে নি‌য়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন ক‌রে অর্ধ‌কো‌টি টাকা হা‌তি‌য়ে নি‌য়ে‌ছেন। বিষয়‌টি আমি লি‌খিতভা‌বে সং‌শ্লিষ্ট দপ্ত‌রে অবগত ক‌রে‌ছি।

 

প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম এসব অ‌ভি‌যোগ অস্বীকার ক‌রে ব‌লেন, গত এক বছর আগে এই চার প‌দে নি‌য়োগ সম্পন্ন করা হয়। সে সময় আব্দ‌ুল ক‌রিম মিয়া সভাপ‌তি ছি‌লেন এবং সব কাগজপ‌ত্রে স্বাক্ষর ক‌রে‌ছেন। সভাপ‌তি ল‌্যাবসহকারী প‌দে দুইজন ব‌্যক্তির কা‌ছে টাকা নি‌য়ে‌ছি‌লেন। কিন্তু ওই দুজনের চাক‌রি না হওয়ার কার‌ণে বি‌ভিন্ন দপ্ত‌রে লি‌খিত অ‌ভি‌যোগ কর‌তে‌ছেন।

 

ভারপ্রাপ্ত উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপ‌জেলা সহকারী ক‌মিশনার (ভূ‌মি) নঈম উদ্দিন ব‌লেন, খোঁজখবর নেওয়ার জন‌্য ওই প্রতিষ্ঠা‌নে মাধ‌্যমিক কর্মকর্তা‌কে পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে। পরবর্তী‌তে এ বিষ‌য়ে প্রয়োজনীয় পদ‌ক্ষেপ নেওয়া হ‌বে।