জাতীয় সংসদের এলডি হলে সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয় এ বৈঠক। বৈঠকে এনসিপি জানতে চায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হতে যাচ্ছে। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়—এ বিষয়ে একটি সাংবিধানিক আদেশের খসড়া প্রণয়ন করা হচ্ছে। তবে এনসিপি নেতারা অভিযোগ করেন, তাদেরকে সেই খসড়া দেখানো হয়নি।
আখতার হোসেন বলেন, “শুধু স্বাক্ষর করলেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা মিললে এনসিপি এতে সই করবে। কমিশন বলেছে, আদেশের প্রস্তুতি চলছে—এটিকে আমরা ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখি। তবে আদেশের বিষয়বস্তু উপস্থাপনে তারা অপারগতা প্রকাশ করায় আশাবাদী হতে পারছি না।”
সম্প্রতি সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, পলাতক আসামিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না এবং জোটভুক্ত প্রার্থীদের নিজেদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। বিএনপি ও সমমনাদের পক্ষ থেকে এই সংশোধনের বিরোধিতা করা হয়েছে; তারা চায়, সবাই ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নিতে পারুক।
তবে জামায়াতে ইসলামীর মতো এনসিপিও দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতাকে সমর্থন করছে। এ প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, “আরপিও সংশোধনকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখি। লক্ষ্য করেছি, সংশোধনের পর বিএনপি তাদের অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করেছে এবং আইন মন্ত্রণালয়ে আপিলের কথা বলছে। অথচ আইন উপদেষ্টা এই প্রক্রিয়ার অংশ নন।”
তিনি আরও বলেন, “আইন উপদেষ্টার কাছে আবেদন করে আরপিও সংশোধন আটকে দেওয়ার যে মানসিকতা দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হয় সরকারের কোনো বিশেষ উপদেষ্টা কিছু দলের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রাখছেন। যদি সরকার কোনো দলের চাপে পড়ে এই সংশোধন থেকে সরে আসে, তাহলে বোঝা যাবে—লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় বিএনপির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া এগোচ্ছে।”
আখতার হোসেন সতর্ক করে বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো করে কোনো দলের চাপে পড়ে যেন জুলাই সনদ কাগুজে দলিলে পরিণত না হয়। এ বিষয়ে আমরা কমিশনকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছি।”
তিনি জানান, সংস্কারের আলোচনা শেষ করে বিচার প্রক্রিয়ার রোডম্যাপ প্রকাশের পরেই নির্বাচনমুখী হওয়া উচিত সরকারের। “এখনও সময় আছে—সরকার চাইলে গণভোটের প্রস্তুতিও এই সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করতে পারে,” বলেন তিনি।
তবে এনসিপি জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ জারি করার বিপক্ষে। তাদের মতে, সংস্কারের জন্য গণভোটই যথেষ্ট। নির্বাচনের দিনই সেই গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দেয় দলটি। কিন্তু আখতার হোসেনের মতে, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—যে আদেশ জারি হবে, তাতে কী বলা আছে তা পরিষ্কারভাবে জানা। শুধু গণভোটের মাধ্যমে সংস্কারের বাস্তবায়ন সুরক্ষিত হবে না।”
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব মিয়া, এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এনসিপির পক্ষে ছিলেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন, খালেদ সাইফুল্লাহ, ও যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।