প্রকাশকালঃ
১০ এপ্রিল ২০২৩ ০৪:২৯ অপরাহ্ণ ৪০৯ বার পঠিত
রমজানের প্রধান শিক্ষা হলো আল্লাহভীতি অর্জন করা। কোনো ব্যক্তি যদি রমজানে আল্লাহ ভীতি অর্জন করতে পারে তবে তার সিয়াম সাধনা সার্থক। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
সুতরাং রোজাদারের উচিত আল্লাহভীতি অর্জনের চেষ্টা করা।
আল্লাহভীরু মানুষ যেমন হয় : আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) মুত্তাকি তথা আল্লাহভীরু মানুষের পরিচয় তুলে ধরে বলেন, ‘তারা হলেন মর্যাদাশীল মানুষ। তারা সত্য বলেন, জীবনযাপনে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেন, বিনয়ের সঙ্গে চলাফেরা করেন, হারাম দৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকেন, উপকারী জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী হন। তারা সামান্য আমলে সন্তুষ্ট হন না এবং বেশি আমলকে বেশি মনে করেন না। তারা নিজেদের দোষী মনে করেন এবং আমলের ব্যাপারে যত্নশীল হন। তাদের নিদর্শন হলো তারা দ্বিনের ওপর অবিচল, ঈমানে দৃঢ়, জ্ঞানে আগ্রহী, চারপাশ সম্পর্কে সজাগ, প্রাচুর্যের মধ্যেও মধ্যপন্থী, ইবাদতে বিনয়ী, দারিদ্র্যে ও বিপদে ধৈর্যশীল, হালাল অনুসন্ধানী, সুপথে উজ্জীবিত, লোভ-লালসা থেকে দূরে, সর্বাবস্থায় পুণ্যের কাজে নিয়োজিত। তাঁর সন্ধ্যা হয় কৃতজ্ঞতার মধ্যে এবং সকাল হয় আল্লাহর কৃতজ্ঞতার মধ্যে। তাঁর কথা ও কাজে মিল থাকে।’ (বিহারুল আনওয়ার, পৃষ্ঠা ৩১৫)
যেভাবে তাকওয়া অর্জন করা যায় : কোরআন ও হাদিসে আল্লাহভীরু মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা বর্ণিত হয়েছে। যা অর্জনের মাধ্যমে মানুষ আল্লাভীরু হতে পারে। যেমন
১. সতর্কতা অবলম্বন করা : আল্লাহভীরু ব্যক্তি সংশয়পূর্ণ বৈধ বিষয়গুলোও পরিহার করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি ক্ষতিকর কাজে জড়িয়ে পড়ার ভয়ে বৈধ অক্ষতিকর বিষয় না ছেড়ে দেওয়া পর্যন্ত আল্লাহভীরুদের স্তরে উন্নীত হতে পারে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫১)
২. অন্যকে ক্ষমা করা : ক্ষমা ও উদারতা আল্লাহভীতি অর্জনের একটি মাধ্যম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং ক্ষমা করে দেওয়াই তাকওয়ার নিকটতর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩৭ )
৩. সুবিচার করা : মানুষের প্রতি সুবিচার করা মুত্তাকি মানুষের বৈশিষ্ট্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সুবিচার করো, এটা তাকওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৮)
৪. সত্যের অনুসরণ : সত্য স্বীকার করা ও তার অনুসরণ তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সত্য এনেছে এবং যারা সত্যকে সত্য বলে স্বীকার করে তারাই আল্লাহভীরু।’ (ঝুমার, আয়াত : ৩৩)
৫. দোয়া করা : তাকওয়া আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। তাই তা অর্জন করতে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা আবশ্যক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা প্রার্থনা করে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি দান করুন, যারা হবে আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর এবং আমাদের করুন মুত্তাকিদের জন্য অনুসরণযোগ্য।’ (সুরা ফোরকান, আয়াত : ৭৪)
৬. আল্লাহভীরু সঙ্গগ্রহণ করা : আল্লাহভীরু মানুষের সঙ্গ ও সাহচার্য মানুষকে আল্লাহভীরু হতে সাহায্য করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১১৯)
তাকওয়ার পুরস্কার : তাকওয়া মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্যের পথ দেখায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে জীবিকা দান করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ২-৩)