গাইবান্ধায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহত ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক জাভেদের তীব্র ব্যথায় কাটছে নির্ঘুম রাত!

প্রকাশকালঃ ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৫:৩৪ অপরাহ্ণ ০ বার পঠিত
গাইবান্ধায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহত ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক জাভেদের তীব্র ব্যথায় কাটছে নির্ঘুম রাত!

ঢাকা প্রেস
সিরাজুল ইসলাম রতন গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ-

 


দেহজুড়ে ১৬টি ছররা বুলেটের আঘাত সেরে উঠলেও, ডান হাতে এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন ব্যথার তীব্র যন্ত্রণা।

শরীরে ২ বার অস্ত্রপাচারের গভীর ক্ষত শুকিয়ে গেলেও হাতটি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে তার। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাতের তীব্র ব্যথা তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সেই ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে গাইবান্ধা শহরের এসকেএস হাসপাতালের ফিজিওথেরাপি সেন্টারে গত তিন সপ্তাহ ধরে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন সাংবাদিক জাভেদ হোসেন। চিকিৎসকরা বলছেন  তার ডান হাত দিয়ে স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করতে পারবেন কিনা তা এখনো রয়ে গেছে অনিশ্চিত।

 

গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঘোষিত দেশ ব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে গাইবান্ধায় রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। তারা মিছিল নিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এ সময় তিন সাংবাদিকসহ অন্তত ২ শতাধিক ছাত্র-জনতা আহত হয় । এসব আহতদের উদ্ধার করে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে তিন সাংবাদিককে ভর্তি করা হয় গাইবান্ধা শহরের এসকেএস হাসপাতালে। সেখানে ঢাকা পোস্টের সাংবাদিক রিপন আকন্দের শরীর থেকে দুটি, বার্তা বাজারের সাংবাদিক সুমন মিয়ার শরীর থেকে পাঁচটি ও ঢাকাটাইমসের জাভেদ হোসেনের শরীর থেকে ১৪টি ছররা গুলি বের করা হয়। পরে এক্সরে রিপোর্টে দেখা যায় সাংবাদিক জাভেদ হোসেনের ডান হাতে আরও দুটি গুলি রয়েছে। এরপর সপ্তাহখানেক পরে অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে সাংবাদিক জাভেদের ডান হাতের কব্জি থেকে দুটি ছররা গুলি বের করা হয়।
 

অপারেশনে গুলি অপসারণ হলেও এখন পর্যন্ত তীব্র ব্যথায় জর্জরিত তার ডান হাত। ভারী কিছু তোলা তো দূরের কথা মোটরসাইকেল চালাতেও কষ্ট হয় সাংবাদিক জাভেদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, তার ডান হাতের অবস্থা আশঙ্কাজনক, যা ভবিষ্যতে তার সাংবাদিকতার ক্যারিয়ারে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
 

গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক জাভেদ হোসেন জানান, গত ৪ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে মারাত্মকভাবে আহত হই। সেদিন আমার শরীরে ১৬ টি ছররা গুলি বৃদ্ধ হয়। তার পর থেকে আমার ডান হাতের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে এখনো সেরে উঠতে পারেনি। আমার হাতের ক্ষত সারানোর জন্য ইতিমধ্যে গাইবান্ধা এসকেএস হাসপাতালে দুই দফায় অপারেশন করা হয়েছে এবং রংপুরের একাধিক ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাতেও তেমন কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে আমি গাইবান্ধার এসকেএস হাসপাতালের ফিজিওথেরাপি সেন্টারে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছি।
 

তিনি আরও বলেন, আমি ডান হাত দিয়ে ভারী কোন কাজ করতে পারি না। দিনের বেলা কোনোমতে কেটে গেলেও রাতে শুরু হয় কষ্ট। তীব্র ব্যথায় ঘুমাতে ঘুমাতে ভোর হয়ে যায়। 
 

সরকারি/বেসরকারিভাবে কোন সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জাভেদ হোসেন বলেন, সহযোগিতা তো দূরের কথা এখন পর্যন্ত কেউ দেখতে আসেনি আমাকে। তবে জেলা তথ্য অফিস গুলিবিদ্ধ সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করেছে কিন্তু এ পর্যন্ত কারো কোন সহযোগিতা পাইনি।
 

গাইবান্ধা এসকেএস ফাউন্ডেশনের মানব সম্পদ বিভাগের সমন্বয়কারী রিজভান রাফিউল হক বলেন, নির্বাহী প্রধান মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ ছাত্র-জনতা ও সাংবাদিকদের পাশে মানবিক দিক বিবেচনায় আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম । তাদের সকল চিকিৎসা ও অপারেশন আমরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করেছি, যাতে তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে আবারও পেশায় ফিরে আসতে পারেন। এসকেএস ফাউন্ডেশন সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সাংবাদিকদের পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।


তিনি আরো বলেন, আমাদের সহায়তা পাওয়া আহতদের মধ্যে একজনের চোখে গুলি লেগেছে, আর সাংবাদিকদের মধ্যে সর্বাধিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ঢাকা টাইমসের জাভেদ হোসেন। তার চিকিৎসা আমরা এখনো অব্যাহত রেখেছি। 

 

গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের সভাপতি অমিতাভ দাশ হিমুন বলেন, জাভেদ একজন পেশাদার সাংবাদিক এবং সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি যেভাবে ছাত্র আন্দোলনের ময়দানে ভূমিকা রেখেছিলেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সেই সময় জাভেদসহ গাইবান্ধার তিনজন সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হন। অন্যরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলেও, জাভেদের ডান হাত এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। আমার মনে করি সরকারিভাবে আহত সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ানো উচিত, এবং বিশেষত জাভেদের চিকিৎসায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।