ঢাকা প্রেসঃ
সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে সাদার শুভ্রতা আর সোনালি রঙ্গে লম্বা সাদার আবরণে ঝুলে আছে কদম ফুল। ফুলে ব্যস্ততা বেড়েছে মৌমাছি সহ নানা রকম পিপড়ার। এ ব্যস্ততা যেন মধু আহরণের তরে। মাঝে মাঝে বৃষ্টির টুপটাপ শব্দে ছন্দ তুলছে আবার ধুয়ে মুছে অমলীন বিমোহিত সৌন্দর্যে ছড়াচ্ছে ফুলগুলো।
আমাদের বাংলাদেশ প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি এবং ঋতুর বর্ষা এক অনন্য ঋতু। আর বর্ষার আগমনকে স্বাগত জানাতে কদম ফুল যেন সর্বদা প্রস্তুত। রূপসী তরুর অন্যতম রূপবতী হলো কদম ফুল। কদম ফুলের সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হন না এমন বেরসিক মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল । আবার বর্ষায় প্রেমিকার মনোরঞ্জনে কদমের জুড়ি নেই। একই সাথে বর্ষার প্রকৃতি বাংলা সাহিত্যে এনে দিয়েছে স্নিগ্ধতা। বর্ষার উপহার সোনা রঙের কদম ফুল নিয়ে রচিত হয়েছে নানা গল্প, উপন্যাস, কবিতা আর গান। মানব কল্যাণে প্রকৃতির সৃষ্টি অসংখ্য ছোট-বড় মাঝারি বৃক্ষরাজির অংশ বিশেষ কদম ফুলের জুড়ি নেই।
নওগাঁর পথে-প্রান্তরে কদম গাছগুলো ভরে উঠতে শুরু করেছে ফুলে ফুলে। এ যেন আবহমান বাংলার বর্ষা বরণের প্রাকৃতিক আয়োজন। বিভিন্ন সড়কের পাশে এখন হলুদ আর সাদায় সেজেছে সর্বত্র। বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে কদম ফুলের। গাছের শাখে শাখে সবুজ পাতার আড়ালে ফুটে উঠেছে অসংখ্য কদম ফুল। অসংখ্য কদম ফুল গাছ দেখা মিলছে যেখানে সবুজ পাতার ফাঁকে উকি দিচ্ছে হলুদ বর্নের অসংখ্য কদম ফুল।
মাঝেমধ্যেই শিক্ষার্থীদের দেখা যাচ্ছে কদম ফুল হাতে নিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে আবার কেউ কেউ ছোট ফুলগুলো কানে গুজে থাকছে।
আষাঢ়-শ্রাবণে কদম গাছ ফুলে ফুলে ভরে থাকে আর প্রকৃতিতে মৌ মৌ গন্ধ থাকে বিরতিহীন তবে সময়ের আগেই দেখা মিলছে কদম ফুলের।কদম ফুলে সৌন্দর্যে পিপাসুদের তৃপ্তি এনে দেয় ।তরুণ-তরুণীরা কদম ফুল তাদের প্রিয়জনকেও উপহার দেয় । মেয়েরা খোঁপায় বাঁধে, খেলায় মেতে উঠে শিশুরাও।মূলত শিশুরা ফুলগুলো ছিঁড়ে ভেতরে থাকা গোলা আবরণ ছোট্ট বল বানিয়ে খেলাধুলা করে।
কদম ফুলের গাছ ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্রে কাজে ব্যবহার হয়। কদম গাছ কমে যাওয়ায় এখন মানুষ ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে। সবাই এখন বাড়ির আঙ্গিনায় ফলমূল ও ফুলের গাছ লাগাচ্ছে যার ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে কদম ফুলের গাছ।
পথচারী নূর ইসলাম ( ৪৫) বলেন- ছোট বেলায় কদম ফুল নিয়ে অনেক খেলাধুলা করেছি, সে-সময় যত গাছ দেখেছি বর্তমানে এতো গাছ চোখে পড়েনা। কদম ফুল অন্যরকম একটা ফুল যেটি দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। আমাদের গাছটিকে রক্ষা করতে বেশি বেশি লাগানো উচিৎ। গাছের বৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রুত বলে জ্বালানিকাঠের জন্য রোপণ করা যেতে পারে । নরম কাঠ বলে নানা কাজে ব্যবহার করা হয়।
বক্তারপুর গ্রামের মামুন বলেন- কদম ফুলের সৌন্দর্য আমাদেরকে মুগ্ধ করে। ফুলগুলো হাতে নিলে এতোই ভালো লাগে যা বলে বুঝানো যাবে না। বর্ষাকালে পথে প্রান্তরে প্রচুর পরিমানে কদম ফুলের দেখা মিলতো যা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা ছোটবেলায় শুনেছি কদম গাছের ছাল জ্বরের ঔষধ হিসেবেও উপকারী আবার কদম পাতার রস কৃমি দূর করে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন- কদম ফুল শুভ্রতার প্রতীক। বাংলাদেশে কদম ফুল বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিস্নাতক দিনে বাঙালিদের মনে অন্য রকম অনূভূতি এনে দেয়। অনেক কবি সাহিত্যিক বর্ষার কদম ফুল নিয়ে অনেক কবিতা সাহিত্য রচনা করেছেন। কদম ফুল আসলে বাংলাদেশের প্রকৃতির বর্ষা মৌসুমে সৌন্দর্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কদম গাছের কাঠ জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হয়। এটির কোনো ঔষধি গুন আছে বলে আমার জানা নেই।