গত ২৭ আগস্ট প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক অধ্যক্ষ মু. আজিজুর রহমানের দায়ের করা একটি রিটের প্রেক্ষিতে বিচারপতি কাজী জিনাত হক এবং বিচারপতি আইনুন নাহারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
রিটকারী আজিজুর রহমানের অভিযোগ—কমিটি গঠনের সময় বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রবিধানমালা ২০০৯ (সংশোধিত ২০১২) অনুসরণ করা হয়নি। ভোটার তালিকা প্রকাশ, শ্রেণিকক্ষে প্রচার, নোটিশ বোর্ডে টানানো এবং এলাকায় প্রচারের মতো বাধ্যতামূলক নিয়মগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
তার অভিযোগ, ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন দাতা সদস্যদের বাদ দিয়ে ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এমনকি মৃত ব্যক্তিদের নামও তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্র পারভেজের মা জানিয়েছেন—তার স্বামী ২০২১ সালে মারা গেলেও ভোটার তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এছাড়া ২০১৭ সালে ২ লাখ টাকা অনুদান দিয়ে আজীবন দাতা সদস্যপদ পাওয়া এক ব্যক্তির নামও তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। রিটকারীর দাবি, নির্বাচনের কোনো তফসিল প্রকাশ না করে গোপনে ভোট সম্পন্ন করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উলিপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুর রহমান বুলবুল অভিযোগ করেন—তিনি ও উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হায়দার, প্রিন্সিপালের কাছে জানতে চাইলে আশ্বাস দেওয়া হলেও পরবর্তীতে তাদের না জানিয়ে ঘুষের বিনিময়ে প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমোদন নিয়ে অবৈধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশকে “সত্যের জয়” হিসেবে উল্লেখ করেন।
তদন্তে দেখা যায়, ভোটার তালিকায় ৪৪, ১০৮, ১৯২ ও ২৭৭ নম্বরে অন্তর্ভুক্তরা সবাই মৃত। অভিভাবক সদস্য সিরাজুল ইসলাম জানান, বাড়ির পাশে মাদ্রাসা থাকলেও কখন ও কীভাবে কমিটি গঠিত হয়েছে সে সম্পর্কে তারা কোনো খবর পাননি। তার অভিযোগ, নিয়োগ–বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে একটি ‘পকেট কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় কাউকে সভাপতি না করে বজরার একজনকে সভাপতি বানানো হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাতার ছেলে ও সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল কাহার নাইমও লিখিত অভিযোগ করেছেন। তার দাবি, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাদ্রাসার কাগজপত্রের সাথে জমির করের রশিদ জালিয়াতি করে অনুমোদন নবায়ন করেছেন। ১৫ শতক জমিকে এডিট করে ১৭৭ শতক দেখিয়ে করের রশিদ তৈরি করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আলতাফ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা নিয়ম মেনেই নির্বাচন করেছি। ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম কিভাবে এলো তা বলতে পারছি না, হয়তো কেরানির ভুলে হয়েছে।” তিনি আরও জানান, বিষয়টি যেহেতু উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে তদন্তাধীন, সেখানে সত্য উদঘাটিত হবে।
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আজিজুর রহমান গত ৫ আগস্ট মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দিলে বোর্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে ইউএনও উলিপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, “হাইকোর্ট স্থগিতাদেশের ব্যাপারে আমি জানি না। তবে তদন্ত চলছে, এখনো শেষ হয়নি। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়া এ বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”