চলচ্চিত্রে শাকিব খানের ২৪ বছর। দুইযুগ পূর্ণ হলো। ১৯৯৯-এর 'অনন্ত ভালোবাসা' থেকে শুরু হয়ে ২০২৩-এ 'লিডার আমিই বাংলাদেশ' । আজ ক্যারিয়ারের ২৪ বছর পূর্ণ করলেন তিনি।
চলচ্চিত্রের দুই যুগ পার করা এই নায়ক পার করছেন দারুণ সময়। যে সময়ের জন্য একদিন তিনি স্বপ্ন দেখতেন, যে স্বপ্ন তাকে ঘুমুতে দিত না। নারায়ণগঞ্জ থেকে এফডিসি, এফডিসি থেকে কাকরাইল, পরিচালকদের দুয়ারে দুয়ারে হানা- সবই করেছেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ তিনি রাজ করছেন এ অঙ্গন।
১৯৯৯ সালে সোহানুর রহমান সোহানের 'অনন্ত ভালোবাসা' ছবির হ্যাংলা-পাতলা ছেলেটাই একদিন চলচ্চিত্রে রাজ করবেন- এমনটা কেউ ভাবেননি। সাফল্য ও দর্শকপ্রিয়তার বিচারে শাকিব খানের ধারে-কাছেও কোনো নায়ককে পাওয়া যাবে না।
চিত্রনায়ক মান্নার মৃত্যুর পর শাকিবের উত্থান। আজ ঢাকা তো কাল ভারত, মালয়েশিয়া, স্কটল্যান্ড, লন্ডন হয়ে অস্ট্রেলিয়া।
অপ্রতিরোধ্যতার অগ্রযাত্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী পথচলা অভিযাত্রী শাকিব খান। তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী নায়কও বটে। নিজেকে বাংলাদেশের সিনেমার আচ্ছাদন মনে করেন কি-না প্রশ্নে শাকিব কৌশলী কিন্তু আত্মবিশ্বাসী।
তিনি বলেন, আমি যখন যে কাজটি করি, তা শতভাগ মনোযোগ দিয়েই করি। সেই কাজের সঙ্গে আমার প্রেম থাকে।
এখন দর্শক আমাকে বাংলাদেশের সিনেমার শামিয়ানা মনে করলে তাদের রায় মাথা পেতে নেব।'
অন্য আট-দশ জনের মতো শাকিবের ইচ্ছে ছিল ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। তিনি বলেন, সায়েন্সের ছাত্র ছিলাম। সবসময় ভাবতাম ডাক্তার হয়ে দেশের মানুষের সেবা করব। কিন্তু এইচএসসির পর হঠাৎ করেই সব স্বপ্ন হারিয়ে যেতে থাকল। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার না হয়ে হলাম অভিনেতা।' ১৯৯৯ সালের ২৮ মে মুক্তি পায় শাকিব অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র 'অনন্ত ভালোবাসা'।
আপনার কাছে সাফল্যের মূলমন্ত্র কী? শাকিবের উত্তর, 'কোনো মূলমন্ত্র নেই। তবে একজন হিরোর সাফল্যের মূলমন্ত্র কিন্তু দর্শকদের ভালোবাসা। নায়ক যদি দর্শকদের চাওয়া-পাওয়ার মূল্য দেয়, তাহলে দর্শকদের কাছে সে গ্রহণযোগ্যতা পায়। সাফল্যও আসে।'
বর্তমানে একমাত্র শাকিব খানের ছবি নিশ্চয়তা দিতে পারছে প্রয়োজকদের। তাদের টাকা ফেরতের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছেন তিনি। এর ফাঁকে মাঝে মধ্যে ২-১টি সিনেমা দর্শকদের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছে। তবে, এই সংখ্যা হাতেগোনা। দিন শেষে শাকিবেই ভরসা রাখছেন সব প্রযোজক। শাকিব খান অভিনীত ছবি মানেই প্রযোজকদের নিশ্চয়তা। শাকিব খান এখন আগাগোড়াই বিপ্রফেশনাল নায়ক। অভিনয় জীবনে তার যা কিছু অর্জন সবকিছুই তিনি কখনও দর্শকের জন্য উৎসর্গ করেছেন, কখনও ছেলে আব্রাম খান জয়কে ও শেহজাদ খান বীর, কখনও বা উৎসর্গ করেছেন মা-বাবাকে। এত এত যার সাফল্য, এত এত যার ভাঁড় তার একটু ভুল হবে না, তা কিন্তু নয়।
বিগত ১০ বছরে বেশ সমালোচিতও হয়েছেন শাকিব। অপু-বুবলীর সঙ্গে প্রেম, বিয়ে ও ডিভোর্স, এফডিসিতে প্রহূত ও নির্বাচনে সমর্থিত প্যানেলের পরাজয়, বারবার বয়কটের শিকার, মানহানি মামলা, সন্তান নিয়ে থানা-পুলিশ ইত্যাদি নিয়ে বেশ সমালোচিতও এ নায়ক।
শাকিব জানান, চলচ্চিত্রই তার ধ্যান জ্ঞান। অথচ এখন শাকিব অভিনীত চলচ্চিত্রও খুব কম মুক্তি পাচ্ছে। অথচ গত এক দশক শাকিব বিরতিহীনভাবে কাজ করেছেন। বছরের ৩৬৫ দিনই তাকে শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। এখন সে ব্যস্ততা কমিয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে তো কেবল উৎসবেই মুক্তি পাচ্ছে তার ছবি। ছবির সংখ্যা কমানোর কথা জানতে চাইলে উত্তরে শাকিব বলেন, 'কয়েক বছর আগেও তো বছরে ১০টি ছবি মুক্তি পেত আমার। এখন ছবির সংখ্যা অনেক কমিয়ে দিয়েছি। সেটা নানা কারণেই। তবে যে ছবিগুলো করব সেগুলো কোয়ালিটি সম্পন্ন ছবিই হবে।
ইতিমধ্যে ঈদুল আজহার জন্য প্রিয়তমা' নামে একটি ছবির শুটিঙ করছেন শাকিব। নায়কের ভাষ্য, অসাধারণ গল্পের ছবি এটি। প্রযোজক আরশাদ আদনানের প্রযোজনায় হিমেল আশরাফ বানাচ্ছেন ছবিটি। ছবিটিতে দারুণ কিছু লুকে পাওয়া যাবে শাকিবকে। যা দর্শকদের খুবই পছন্দের হবে।