অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে হরহামেশা সবাইকে ‘শাহবাগী’ বলে দেগে দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার এক দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে তিনি এ বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেন।
মাহফুজ আলম বলেন, জামায়াত অতীতে যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল। তবে জামায়াতের নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগই পাকিস্তানপন্থী নয়, ফলে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ ট্যাগ দিয়ে তাদের রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করা যাবে না। বরং আদর্শিক ও রাজনৈতিক লড়াইয়ের মাধ্যমেই প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে হবে।
তিনি বলেন, শাহবাগ আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক তরুণ-ছাত্র নিছক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গিয়েছিলেন, ইসলামবিদ্বেষ থেকে নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বামপন্থি মুজিববাদীরা তাদের আবেগকে ব্যবহার করে দেশে ‘মবোক্রেসি’ প্রতিষ্ঠা করেছিল, যার ফলশ্রুতিতে এক দশকের ফ্যাসিবাদী শাসন, গুম, খুন, ধর্ষণ ও নিপীড়ন চলেছে।
তিনি আরও বলেন, শাহবাগে অংশ নেওয়া অনেকেই পরবর্তীতে তাদের অবস্থান সংশোধন করেছেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এবং নিজেদের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন। তারা আজকের পরিবর্তনের অংশীদার। তাই রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে তাদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো ঠিক হবে না।
মাহফুজ আলম বলেন, “আমি নিজে শাপলার আন্দোলনে নবীজির প্রতি ভালোবাসার টানে গিয়েছিলাম, কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচার কিংবা জামায়াত নেতাদের ভূমিকা নিয়ে আগ্রহী ছিলাম না। বরং আমরা ছোটবেলা থেকেই জামায়াতকে আলেম-ওলামাবিরোধী গোষ্ঠী হিসেবে জেনেছি। অনেক শাপলা কর্মীও জামায়াতের আকিদা ও নেতৃত্বের বিরোধী ছিলেন, যদিও রাজনৈতিক বাস্তবতায় জামায়াত তাদের প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করতে পেরেছে, যেমন আওয়ামী লীগ শাহবাগকে করেছে।”
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, অভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে আমাদের সংলাপের দিকে যেতে হবে। মুজিববাদ, ভারতপন্থা ও শেখ পরিবারের একনায়কত্বের বিরুদ্ধে শাপলা ও সাবেক শাহবাগীদের একসঙ্গে লড়াই করায়ই পরিবর্তন এসেছে। এখন শাপলার নেতৃত্বের জন্যও কারও প্রক্সি না হয়ে রাষ্ট্রে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরির সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আমি পূর্বে আলেম-ওলামাদের তাদের শক্তিশালী ভূমিকায় ধন্যবাদ জানিয়েছি। আশা করি, তারা গণতান্ত্রিক ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াবেন এবং শাহবাগের মতো বিচারহীনতার সংস্কৃতি চর্চা করবেন না।”
তিনি বলেন, “সাবেক ‘শাহবাগী’ যারা মুজিববাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, তাদের বধযোগ্য হিসেবে দেখলে বৃহত্তর সংহতি নষ্ট হবে। তবে এখনো যারা মুজিববাদ, ভারতপন্থা ও শেখ পরিবারের প্রতি আনুগত্য পোষণ করে, তাদের ছাড় দেওয়া উচিত নয়। এরা গুম, গণহত্যা ও নিপীড়নের মূল পরিকল্পনাকারী ও সমর্থক ছিল, এবং তারা জনগণ ও গণতন্ত্রের শত্রু।”
মাহফুজ আলম বলেন, “অভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে আমাদের বিচারহীনতা ও মবোক্রেসির সংস্কৃতি পরিহার করে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও সংলাপের পথে এগোতে হবে। সাবেক ‘শাহবাগীদের’ যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছেন, তাদেরকে ট্যাগ দিয়ে বৈরিতা সৃষ্টি করা সবার জন্য ক্ষতিকর হবে। আমাদের শত্রুদের সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের রাজনৈতিক পরাজয় নিশ্চিত করতে হবে।”