দুনিয়ায় মুমিনের পরীক্ষার কেন্দ্র বা শস্যক্ষেত্র

প্রকাশকালঃ ২১ আগu ২০২৩ ০১:৪১ অপরাহ্ণ ৪৩১ বার পঠিত
দুনিয়ায় মুমিনের পরীক্ষার কেন্দ্র বা শস্যক্ষেত্র

দুনিয়ায় মুমিনকে শরিয়তের বিধি-নিষেধ মেনে জীবন যাপন করতে হয়। তা মুমিনের জন্য পরীক্ষার কেন্দ্র বা শস্যক্ষেত্রের মতো। এর সুফল মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য সংরক্ষিত থাকে। তাই পার্থিব জীবনে মুমিনরা যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে চলতে পারে না।

ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি মৃত্যু ও জীবনকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য, কে তোমাদের মধ্যে কাজে উত্তম, তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল।’ (সুরা মুলক, আয়াত : ২)


নানাভাবে পরীক্ষা : তাই নানা সময়ে আল্লাহ মানুষকে নানা উপায়ে পরীক্ষা করে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলা কোরআনে সুসংবাদ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তোমাদের সামান্য ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, প্রাণ ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে অবশ্যই পরীক্ষা করব।

আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন, যারা বিপদে আক্রান্ত হলে বলে, আমরা তো আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই ফিরব।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৬)


কঠিন বিপদে পড়েন যাঁরা : যুগে যুগে নবী-রাসুল এবং তাঁদের অনুসারীরা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। ঠিক তেমনি সাহাবা, তাবেয়ি, তাবে তাবেয়ি এবং তাঁদের অনুসারীরাও কঠিন পরীক্ষায় পড়েছেন। এসব ক্ষেত্রে যাঁরা ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেছেন তাঁদের জন্য পরকালে রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার।

তাই ধৈর্য ধারণ করা ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে অবিচল থাকা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সাআদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা.) জিজ্ঞাসা করেছেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), মানুষের মধ্যে কে সবচেয়ে কঠিন বিপদের মুখোমুখি হয়? তিনি বলেন, প্রথমত নবীরা, অতঃপর যারা তাদের মতো। অতঃপর মানুষকে তার দ্বিনদার অনুপাতে পরীক্ষা করা হয়। কেউ শক্তভাবে দ্বিন অনুসরণ করলে তার পরীক্ষাও কঠিন হয়ে থাকে। কেউ দ্বিনদারিতে শিথিল হলে তার পরীক্ষাও তেমন হয়।

অতঃপর বান্দা একের পর এক বিপদে আক্রান্ত হতে থাকে। এক পর্যায়ে সে পুরোপুরি গুনাহমুক্ত হয়ে ভূমিতে চলাফেরা করে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৮)


মুমিনের কারাগার : অতএব, মুমিনরা পার্থিব জীবনে সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করে। দুনিয়ার জীবনে সে আল্লাহর নির্দেশনা পালন করে। তার সব আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয় না। আবার আল্লাহর সন্তুষ্টির অনেক কিছু তাকে বর্জন করে চলতে হয়। এই বিধি-নিষেধ শুধু এ জগতেই সীমাবদ্ধ। মৃত্যুর পর তার জন্য রয়েছে অফুরন্ত জীবন; তখন সে যেমন চাইবে সেভাবে চলতে পারবে। তাই হাদিসে দুনিয়াকে কারাগার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ কারাবন্দিরা যা ইচ্ছা তা করতে পারে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার এবং কাফির ব্যক্তির জন্য জান্নাতের সমতুল্য। (মুসলিম, হাদিস : ২৯৫৬)

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেছেন, মৃত্যুর পর মুমিনকে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে অফুরন্ত নিয়ামতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সেই তুলনায় দুনিয়া তার কাছে কারাগারের মতো। অন্যদিকে মৃত্যুর পর কাফিরের জন্য আল্লাহর যে আজাবের প্রতিশ্রুতি রয়েছে, সেই তুলনায় দুনিয়া তার কাছে জান্নাতের মতো। অর্থাৎ পরকালের অফুরন্ত সুখ বা দুঃখের বিবেচনায় দুনিয়ার জীবন মানুষের জন্য কারাগার বা জান্নাত হবে। (জামিউর রাসাইল, ২৬১/২)


কষ্টের বিনিময় : এমনকি আখিরাতের অফুরন্ত প্রতিদান দেখে দুনিয়ার বিপদমুক্ত ব্যক্তিরা নিজেদের জন্য আফসোস করবে। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন দুনিয়ায় বিপদগ্রস্তদের যখন সওয়াব দেওয়া হবে তখন বিপদমুক্ত ব্যক্তিরা আশা করবে, দুনিয়ায় যদি তাদের চামড়া কাঁচি দিয়ে কাটা হতো! (তিরমিজি, হাদিস : ২৪০২)

মহান আল্লাহ আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে সৎকর্মশীলদের কাতারে শামিল করুন।