প্রায় কম-বেশি সবাই মাথাব্যথার সমস্যায় ভুগে থাকেন। অনেক সময় ঠান্ডা বা সর্দি জ্বর বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে মাথাব্যথা হলে কিছুদিন পর তা ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু অনেকেই বলে থাকেন, তাদের এসব কোনো সমস্যা না থাকার পরও মাথাব্যথা করে। স্বাভাবিকভাবে নিজেকে সুস্থ মনে হওয়ার পরও মাথাব্যথা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।
বিশ্বজুড়ে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষের ৪৬ শতাংশ প্রতিবছর অন্তত একবার মাথাব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে মানুষ তার কর্মক্ষমতা হারায় এবং একইসঙ্গে সময়ও নষ্ট হয়। কিন্তু কেন মাথাব্যথা হয়, এর লক্ষণ কী ও প্রতিরোধের উপায় নিয়ে দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানী ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী। এবার তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।
মাইগ্রেন: ১১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের এই মাইগ্রেনজনিত রোগ রয়েছে। সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের সমস্যা বেশি দেখা দেয়। বিশেষ করে ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে এর লক্ষণ শুরু হয়ে যা স্থায়ী হয় ৪০-৫০ বছর বয়স পর্যন্ত। এই রোগের লক্ষণ হচ্ছে মাথার যেকোনো অংশে ব্যথা, মাথার একপাশে ব্যথা হলে পরবর্তীতে অন্যপাশে ব্যথা। যা চার থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়া মাইগ্রেনের কারণে রক্তনালি সংকোচন বা প্রসারণ বা টনটনের মতো ব্যথাও অনুভব হতে পারে। সূর্যের বা বৈদ্যুতিক আলো কিংবা শব্দে ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করে। অন্ধকারে থাকলে ব্যথা কিছুটা কমে। চিন্তাজাতীয় ব্যথা: দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের কারণে ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের টেনশন টাইপ হেডেক বা চিন্তাজাতীয় মাথাব্যথা হয়ে থাকে। এতে মাথার মাংসপেশির সংকোচনের জন্য ব্যথা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় মাথাজুড়ে ব্যথা হয়। তবে তা মাইগ্রেনের মতো তীব্র আকার ধারণ করে না। কাজ করার সময় ব্যথা অনুভব না হলেও পরে এই ব্যথা হয়। এই ব্যথা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
ক্লাস্টার হেডেক: এই ব্যথা তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়। শূন্য দশমিক ১ শতাংশ মানুষের মাঝে এই ধরনের ব্যথা হয়। সাধারণত পুরুষের মধ্যে বেশি দেখা যায় এই ক্লাস্টার হেডেক। এই ব্যথা ক্ষণস্থায়ী তবে বারবার হয়। ব্যথা হলে তা তীব্র হয়। যখন ব্যথা হয় তখন চোখের চারপাশে বা পেছনে ব্যথা করে, চোখ লাল হয় এবং পানি পড়ে। চোখের ওপরের পাতা পড়েও যায় এবং প্রতিদিনই একই সময় বা দিনে কয়েকবার বা কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয়ে থাকে এই ব্যথা।
মাথাব্যথার এসব লক্ষণ হচ্ছে প্রাথমিক ব্যথার সমস্যা। তবে ব্যথার পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে মস্তিষ্কের আবরণীয় প্রদাহ (মেনিনজাইটিস), সাইনুসাইটিস, মাসটয়েডাইটিস, রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক, মস্তিষ্কের টিউমার ও মাথায় আঘাত পাওয়া।
প্রাথমিক পর্যায়ের ব্যথার চিকিৎসা হচ্ছে দুই স্তরের। এ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য বেদনানাশক ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। কেউ কেউ দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার জন্য ওষুধ সেবন করেন। এটি হচ্ছে প্রোফাইলেকটিক চিকিৎসা, অর্থাৎ বারবার যেন মাথাব্যথা না হয় এবং ব্যথার তীব্রতা কম থাকবে। এছাড়া কিছু অভ্যাসেও পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হয়।
যারা ধূমপান বা অতিরিক্ত ধূমপান করেন, মদ্যপান, চা-কফি পান, ঘুমের ওষুধ অতিরিক্ত সেবন, রোদ বা অতিরিক্ত গরম থেকেও মাথাব্যথা হতে পারে। এছাড়া দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যথা যে কারণে মাথাব্যথা হয়, তার চিকিৎসা করাতে হয়। আবার যেকোনো কারণেই মাথাব্যথা তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।