খুলনা প্রতিনিধি:-
খুলনার আলোচিত শীর্ষ চরমপন্থি নেতা শেখ শাহিনুল হক শাহীন ওরফে বড় শাহীনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনা এক ভয়াবহ প্রতিশোধের কাহিনি। ৫ আগস্ট রনির বাড়িতে হামলা ও তার বাবা-মাকে মারধরের প্রতিশোধ নিতে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন শেখ শাহিনের সাবেক অনুসারী শাহনেওয়াজ পারভেজ রনি। পরিকল্পনায় ব্যবহার করা হয় রনির দ্বিতীয় স্ত্রী হীরা ঢালীকে, যিনি প্রেমের ফাঁদে ফেলে শাহীনকে ডেকে নিয়ে আসেন খুনের স্থানে।
গত ১৫ মার্চ রাতে দৌলতপুর থেকে ডেকে এনে খুলনার বাগমারার একটি নির্জন সড়কে খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় বড় শাহীনকে। হত্যার ঘটনায় রনি ও হীরা ঢালী গতকাল শুক্রবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ৭ এপ্রিল পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে এবং জবানবন্দি শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পুলিশ জানায়, ১৫ বছর আগে রনি পুলিশকে তথ্য দিয়ে বড় শাহীনকে গ্রেপ্তার করান। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর শাহীন ফিরে এসে প্রতিশোধ নিতে রনির বাড়িতে হামলা চালান। এতে রনির বাবা-মা গুরুতর আহত হন। এরপর থেকেই প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠেন রনি।
তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা সদর থানার এসআই মনির হোসেন জানান, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রনি গত ডিসেম্বর থেকে শাহীনের গতিবিধি নজরে রাখেন। জানুয়ারিতে হীরা ঢালী মোবাইল ফোনে শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে বাগমারার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন হীরা, যেখানে শাহীন নিয়মিত যাতায়াত করতেন। হীরা তার অবস্থানসহ নানা তথ্য নিয়মিত রনিকে জানাতেন।
হত্যার দিন, ১৫ মার্চ রাতে হীরার বাসায় ডেকে আনা হয় শাহীনকে। রাত ১১টার পরপরই হীরা ও রনির উপস্থিতিতে কয়েকজন সন্ত্রাসী খুব কাছ থেকে গুলি করে তাকে হত্যা করে। এরপর রনি খালিশপুরে পালিয়ে যান এবং হীরা ভাড়া বাসায় অবস্থান করেই সন্দেহ এড়ানোর চেষ্টা করেন।
ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে রনি ও হীরার উপস্থিতির প্রমাণ মেলে। প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ।
খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ হাওলাদার সানোয়ার হুসাইন মাসুম জানান, রনিকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হীরা ঢালী ও আমিনুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তারা আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।