রাজশাহী ব্যুরোঃ
রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট গ্রামে গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে নিহত দুই বছরের শিশু সাজিদকে চিরবিদায় জানিয়েছেন এলাকাবাসী। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় কোয়েলহাট গ্রামে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজারো মানুষ অংশ নেন। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
জানাজায় অংশ নিয়ে নিহত সাজিদের বাবা রাকিবুল হোসেন গর্ত খননকারী কছির উদ্দীনের কঠোর শাস্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, কছির উদ্দীন নিয়ম ভেঙে ওই জমিতে গভীর নলকূপের জন্য একাধিক গর্ত খনন করেছিলেন এবং সেগুলো অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রাখেন। তাঁর অবহেলার কারণেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।
রাকিবুল হোসেন বলেন, ‘ওখানে শুধু একটি নয়, আরও দুটি গর্ত রয়েছে। গর্ত খনন করার পর সেগুলো ভরাট করা হয়নি। যদি গর্তটি ভরাট করা থাকত, তাহলে আমার সন্তানকে হারাতে হতো না। আমার ছেলেটা প্রায় ৪৫ ফুট নিচে শীতের ঠান্ডায় ৩২ ঘণ্টা পড়ে ছিল। এই অবহেলার কারণেই আজ আমার কলিজার টুকরা চলে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিচার চাই—যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো বাবা-মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়।’
শিশু সাজিদকে একনজর দেখতে শুক্রবার সকাল থেকেই কোয়েলহাট গ্রামে মানুষের ঢল নামে। প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন মা রুনা খাতুন। জানাজাস্থলের পাশে বাড়ির উঠানে ভাঙা গলায় তিনি জানান, দুই বছর আগে কছির উদ্দীন তাঁর বাড়ির পাশেই তিনটি গর্ত খনন করেন। সেখানে পানি না পাওয়ায় গর্তগুলো ভরাট না করেই ফেলে রাখেন। তাঁর অবহেলার কারণেই সাজিদের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন এবং ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
নিহত সাজিদের বাবা রাকিবুল হোসেন গাজীপুরে একটি গুদামে কর্মরত। স্ত্রী ও সন্তান গ্রামের বাড়িতে থাকতেন।
পাঁচন্দর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির জুয়েল রানা বলেন, কছির উদ্দীন একজন প্রবাসী। তাঁর ভাই আব্দুল করিম জামায়াতের রোকন। গর্ত খননের পর পানি না পাওয়ায় তিনি অন্যত্র গভীর নলকূপ স্থাপন করেন। গর্তটি ভরাট করা হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, বর্ষায় মাটি সরে যাওয়ায় দুর্ঘটনাটি ঘটতে পারে। তবে ঘটনাটিকে তিনি অনাকাঙ্ক্ষিত বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে। কছির উদ্দীন ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন এবং তাকে খুঁজছে পুলিশ।
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা খান বলেন, পুলিশ বা ভুক্তভোগীর পরিবার চাইলে মামলা করতে পারে। এ বিষয়ে ইউএনওর সরাসরি করার মতো কিছু নেই।