সর্বজনীন পেনশনের আন্দোলন থেকে পিছু হটবেন না শিক্ষকরা
প্রকাশকালঃ
০৮ জুলাই ২০২৪ ০১:৩৭ অপরাহ্ণ ৫৩০ বার পঠিত
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তি বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষকরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারও খোলা হয়নি। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ফেডারেশনভুক্ত ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কর্মবিরতি পালিত হয়।
একদিকে শিক্ষকদের কর্মবিরতি, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শিক্ষক নেতারা বলছেন, শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে ও ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। চলমান আন্দোলন ব্যর্থ হলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা আর শিক্ষকতায় আসবেন না। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন থেকে পিছু হটবেন না।
গতকাল দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কলা ভবনের ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ ছাড়া সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদও কর্মবিরতি পালন করে। সকাল থেকেই কর্মবিরতির অংশ হিসেবে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘এই আন্দোলন থেকে শিক্ষকসমাজ পিছু হটবে না।
এই আন্দোলন চলমান থাকবে, আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। এই আন্দোলন নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। এই আন্দোলন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয়, এটা শুধু প্রত্যয়ের বিরুদ্ধে, যাঁরা এই স্কিম চালু করে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করতে চাচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে।’ ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই তিন দফা দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের দাবি মেনে না নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
২০১৫ সালে আমাদের সুপারগ্রেড দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো এক অদৃশ্য শক্তিবলে আমরা পাইনি। আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আমাদের স্বতন্ত্র বেতনকাঠামোর কথা থাকলেও তা আমরা পাইনি। এরপর আবার আমাদের ওপর প্রত্যয় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ নিজামুল হক ভূইয়া আরো বলেন, ‘এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি তিন শতাধিক শিক্ষক। সুতরাং আমাদের এই আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক। তাই আমরা বলতে চাই, আমাদের দাবি মানা না হলে আন্দোলন থামাব না।’
সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বৈঠক হয়নি। তবে আমার সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীসহ অনেকের কথা হয়েছে। অচিরেই আমরা আলোচনার আশা করছি এবং তা হতে হবে।’ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বারবার যুক্তি দেখাচ্ছি। প্রথম দিকে আমরা মৌন কর্মসূচি পালন করেছি। এরপর গত সাত দিন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছি, তবু রাষ্ট্র থেকে একটি কল পর্যন্ত করা হয়নি।
এটি শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’ শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু সালেহ জানান, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক সমিতি নেই। তবে গতকাল অনুষ্ঠিত এক ডিন সভায় সব শিক্ষক দাবির পক্ষে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, ফেডারেশনভুক্ত ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিই তাদের নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন। সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি বাতিলসহ শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ও সুপারগ্রেড প্রণয়নের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও।