ঝিনাইদহের শৈলকুপায় দীর্ঘদিন পর আবারও অবৈধ অস্ত্রধারীদের তৎপরতা দেখা গেল। শুক্রবার রাতে তিন চরমপন্থিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার। এলাকাবাসীর ধারণা, এটি হয়তো ১৫ বছর আগের শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাটে সংঘটিত জাসদ গণবাহিনীর পাঁচ কর্মী হত্যার প্রতিশোধ বা নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের প্রয়াস।
এ ঘটনার দায় স্বীকার করে কুষ্টিয়া এলাকার জাসদ গণবাহিনীর নেতা কালু একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছেন সংবাদকর্মীদের। বার্তায় বলা হয়েছে, “ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনার জনগণকে জানানো যাচ্ছে, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীর শীর্ষ নেতা হানিফ ও তার দুই সহযোগীকে জাসদ গণবাহিনী খতম করেছে। হানিফের সহযোগীদের সতর্ক করা হলো, অন্যথায় তাদের একই পরিণতি হবে।”
হত্যাকাণ্ডে নিহত তিনজন হলেন:
(১) হানিফ আলী (৫৬) – পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (জনযুদ্ধ) লাল পতাকার সামরিক কমান্ডার, আহাদনগর, হরিণাকুন্ডু।
(২) লিটন হোসেন (৩৮) – হানিফের শ্যালক, শ্রীরামপুর, হরিণাকুন্ডু।
(৩) রাইসুল ইসলাম রাজু (২৮) – পিয়ারপুর, কুষ্টিয়া ইবি থানা।
রাইসুলের মরদেহ ধানখেতের পানির মধ্যে পাওয়া যায়, আর হানিফ ও লিটনের মরদেহের পাশে ছিল দুটি পালসার মোটরসাইকেল ও তাদের হেলমেট। নিহতদের শরীরে মাথা ও বুকে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।
নিহতদের প্রত্যেককে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে নেওয়া হয়। তবে তাদের পরিবারের সদস্যরা বলতে পারেননি, কারা তাদের কল করেছিল। জানা গেছে, ৯০-এর দশকে হানিফ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা ও ডাকাতির মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তার বিরুদ্ধে ১৪টি হত্যাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। ২০১৪ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর হরিণাকুন্ডুর নারানকান্দি বাওড় দখল করে মাছ চাষ শুরু করেন। ২০১৭ সালে তিনি মৎসজীবী সমিতির সভাপতি জিয়াউল হককে গুলি করে হত্যা করে বাওড়ের দখল নেন।
সম্প্রতি বাওড়ের দখল নিয়ে চরমপন্থি গ্রুপগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই বিরোধ থেকেই হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত।
শৈলকুপার ত্রিবেণী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাটে ঘটনাস্থল থেকে শর্টগানের ৭ রাউন্ড ও পিস্তলের ৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে শর্টগানের চারটি গুলি ব্যবহৃত হয়েছিল।
হানিফের ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম ইশা জানান, শুক্রবার বিকেলে তার ভাইয়ের মোবাইলে একটি কল আসে, এরপর তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান এবং রাতে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, “বাওড়ের দখল নিয়ে বিরোধের কারণেই হয়তো তাকে হত্যা করা হয়েছে।”
রাইসুলের মামা লিটন হোসেন দাবি করেন, রাইসুল কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল না।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান জানান, গুলিবিদ্ধ তিনটি মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন এবং ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।