আত্মত্যাগে জমজম কূপ

প্রকাশকালঃ ১৮ জুন ২০২৩ ০১:৪১ অপরাহ্ণ ১৬৩ বার পঠিত
আত্মত্যাগে জমজম কূপ

শূন্য প্রান্তরে স্ত্রী ও সন্তান : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, নারীজাতি ইসমাঈল (আ.)-এর মায়ের কাছ থেকে সর্বপ্রথম কোমরবন্ধ বানানো শিখেছে। সারাহ (আ.) থেকে নিজের মর্যাদা গোপন রাখতে হাজেরা (আ.) তা পরতেন। এরপর ইবরাহিম (আ.) হাজেরা ও তাঁর শিশুপুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে নিয়ে বের হন। তখন হাজেরা (আ.) শিশুকে দুধ পান করাতেন।

ইবরাহিম (আ.) উভয়কে নিয়ে পবিত্র কাবাঘরের পাশে মসজিদের উঁচু অংশে জমজম কূপের ওপর বিরাট গাছের নিচে তাদের রাখলেন। তখন মক্কায় কোনো মানুষ ছিল না। কোনো পানির ব্যবস্থা ছিল না। তিনি তাদের কাছে একটি থলেতে কিছু খেজুর ও একটি মশকে কিছু পানি রাখলেন।

আল্লাহর ওপর স্ত্রীর আস্থা : অতঃপর ইবরাহিম (আ.) ফিরে গেলেন। তখন ইসমাঈল (আ.)-এর মা পেছন পেছন এসে বললেন, হে ইবরাহিম, আপনি কোথায় চলে যাচ্ছেন? আমাদের এ কোন প্রান্তরে রেখে যাচ্ছেন, যেখানে কোনো মানুষ ও কোনো কিছুই নেই। কয়েকবার বললেও ইবরাহিম (আ.) তাঁর দিকে ফিরে দেখলেন না। তখন হাজেরা (আ.) বললেন, আল্লাহ কি আপনাকে এই ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন? ইবরাহিম (আ.) বললেন, হ্যাঁ।


এ কথা শুনে হাজেরা (আ.) বললেন, তাহলে আল্লাহ আমাদের ধ্বংস করবেন না। অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং ইবরাহিম (আ.) চলে গেলেন।

পরিবারের জন্য স্বামীর দোয়া : ইবরাহিম (আ.) পথের বাঁকে পৌঁছলে পরিবারকে আর দেখতে পেলেন না। তখন তিনি কাবাঘরের দিকে ফিরে দুই হাত তুলে (কোরআনে বর্ণিত) দোয়াটি করলেন। তিনি বললেন, ‘হে আমার রব, আমি আমার পরিবারকে আপনার সম্মানিত ঘরের কাছে এক অনুর্বর উপত্যকায় অধিবাসী করে যাচ্ছি, হে আমাদের রব, যেন তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, অতএব আপনি কিছু লোকের অন্তর তাদের অনুরাগী করে দিন এবং বিভিন্ন ফল দিয়ে তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করুন, যেন আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩৭)


সন্তানের জন্য পানির অনুসন্ধান : হাজেরা (আ.) শিশুপুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে স্তনের দুধ পান করান এবং নিজে পাত্র থেকে পানি পান করে কয়েক দিন অতিবাহিত করেন। একদিন পাত্রের সব পানি ফুরিয়ে গেলে মা ও পুত্র পিপাসায় কাতর হয়ে পড়েন। শিশুপুত্রের এমন করুণ দৃশ্য দেখা তার জন্য অসহনীয় হয়ে পড়ে। তিনি (পানির সন্ধানে) বেরিয়ে পড়েন। তার সবচেয়ে কাছের সাফা পাহাড়ে উঠে উপত্যাকার দিকে তাকালেন যে কাউকে দেখা যায় কি না। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। অতঃপর সাফা পাহাড় থেকে নেমে উপত্যাকায় পৌঁছলেন। তখন কাপড়ের এক প্রান্ত তুলে ধরে খুবই ক্লান্ত মানুষের মতো ছুটে উপত্যকা অতিক্রম করেন। এরপর মারওয়া পাহাড়ে উঠে কাউকে দেখা যায় কি না দেখতে থাকেন। এভাবে তিনি এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড় সাতবার অতিক্রম করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, নবী করিম (সা.) বলেন, তাই মানুষ হজ ও ওমরাহ পালনকালে এই দুই পাহাড়ের মধ্যে সায়ি করে থাকে।

দীর্ঘ চেষ্টার পর পানির সন্ধান : এরপর হাজেরা (আ.) মারওয়া পাহাড়ের উঠে একটি শব্দ শুনে মনে মনে বললেন, একটু অপেক্ষা করি। এরপর ভালো করে শুনে বললেন, তুমি তো শুনিয়েছ আর আমিও শুনেছি। তোমার কাছে কোনো সাহায্যকারী থাকলে (আমাকে সাহায্য কোরো)। হঠাত্ জমজমের অবস্থানে একজন ফেরেশতা দেখতে পান। সেই ফেরেশতা পায়ের গোড়ালি দিয়ে বা ডানা দিয়ে আঘাত করলে পানি বের হওয়া শুরু হয়। আর হাজেরা (আ.) এর চারপাশে নিজ হাত দিয়ে হাউসের মতো করেন। আর উভয় হাত ভরে পানি দিয়ে পাত্র ভরতে লাগলেন। তখন পানি উপচে পড়ছিল। ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা  করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ইসমাঈল (আ.)-এর মাকে অনুগ্রহ করুন। তিনি (বাঁধ না দিয়ে) জমজম ছেড়ে দিলে অথবা হাত ভরে পানি নিলে তা কূপ না হয়ে প্রবহমান ঝরনা হয়ে যেত।

সন্তানকে স্তন্যদান : হাজেরা (আ.) নিজে সেই পানি পান করেন এবং শিশুপুত্রকে দুধ পান করান। তখন ফেরেশতা তাঁকে বলল, আপনি ধ্বংস হওয়ার ভয় করবেন না। এখানে আল্লাহর ঘর রয়েছে। এই শিশু ও তার পিতা এখানে ঘর নির্মাণ করবে। আল্লাহ তাঁর আপনজনদের কখনো ধ্বংস করেন না। ওই সময় আল্লাহর ঘরের স্থানটি টিলার মতো উঁচু ছিল। বন্যার কারণে এর ডান ও বাম দিক ভেঙে যাচ্ছিল। শিশুপুত্রকে নিয়ে হাজেরা (আ.) সেখানে দিন পার করছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৬৪)