আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-
সারাবছরের সংসার খরচ। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা। আছে ঋণের বোঝা। সবকিছুর জন্য আলুর ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল উত্তরের কৃষক। কিন্তু কিছু মুনাফালোভীর কারসাজির কারণে হিমাগারে আলু রাখতে পারেননি তারা। এতে অনেক চাষিই মুষড়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তাদের জন্য সুখবর নিয়ে এসেছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি আলু কিনে বিদেশে পাঠাচ্ছে। ফলে যে আলু নিয়ে দু’দিন আগেও কৃষকের কপালে ছিল চিন্তার ভাঁজ, তাদের মুখেই এখন চওড়া হাসি।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার জুয়ানসেতরা চরের কৃষক লুৎফর রহমান হাজি। তিনি ছয় একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। ফলন ভালো পেয়েছেন। কিন্তু দাম পাচ্ছিলেন না। আবার হিমাগারেরও ব্যবস্থা করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আলু নিয়া কী যে বিপদে পড়ছিলাম, তা কয়য়া সারন যাইত না। শ্যাষে কোম্পানি আইসা আমাগোর আলুর বিহিত হইছে। দামও ভালা পাইছি।’
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি রাজধানী ঢাকাভিত্তিক। বারুন ক্রোপ কেয়ার লিমিটেড ও বারুন এগ্রো লিমিটেড। তারা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আলু কিনে প্যাকেটজাত করে বিদেশে পাঠাচ্ছে। শুধু উলিপুর নয়; গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, নীলফামারী, রংপুরের কাউনিয়া থেকেও আলু কিনছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব আলুর গন্তব্য মালয়েশিয়া, দুবাই, ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা।
প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য, উলিপুর চরের আলুর মান খুব ভালো। অল্প পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় এখানকার আলু দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। ফলে পুষ্টিমান ভালো। খেতেও সুস্বাদু। একই ভাষ্য উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামালেরও।
উলিপুর থেকে ১৮-১৯ টাকা কেজি দরে আলু কিনছে রপ্তনিকারক প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ছে আরও ২ টাকা ৫০ পয়সা। বিদেশে রপ্তানি করে কেজিতে কী পরিমাণ লাভ হবে, তা জানা সম্ভব হয়নি।
এই উপজেলার আরেকটি চর গোড়াই পিয়ার। সেখানকার কৃষক রানা মিয়া। তিনিও আলুর বাম্পার ফলন পেয়েছেন। ১৬ একর জমিতে চাষ করেছিলেন। কিন্তু আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে বারবার ধরনা দিয়েও একটা স্লিপ জোগাড় করতে পারেননি। দালালের শরণাপন্ন হলেও কাজ হয়নি।
কৃষক রানা মিয়াও বারুন গ্রুপের কাছে আলু বিক্রি করেছেন। যে কষ্টের ফসল সত্যিই কষ্টের বোঝা হয়ে উঠেছিল, সেই আলু নিয়ে তিনিই এখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। তিনি ১৭ একরে চাষ করে পেয়েছেন ২৫ টন। কোম্পানির কাছে বিক্রি করেছেন ১৯ টন। তাদের মতো নুর ইসলাম ও মিন্টু মিয়াও আলু বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। মিন্টুর ৬ একরে উৎপাদন হয়েছে ১০ টন। কোম্পানি নিয়েছে ৬ টন।
বারুন গ্রুপের স্থানীয় সরবরাহকারী আবু ইমরান। তিনি বলেন, বিদেশিরা ভালো মানের আলু ছাড়া নেয় না। তাই সান সাহিন জাতসহ উন্নত জাতের আলু কিনে বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছেন তারা। উলিপুর থেকে চার হাজার টন আলু নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ২ হাজার টনের বেশি কেনা হয়েছে।
১০০ কনটেইনারে ২ হাজার ৮০০ টন আলু বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বারুন ক্রোপ কেয়ার লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ছাদেকুল ইসলাম।
উলিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, এ বছর উপজেলায় আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার ৬শ টন। উৎপাদন হয়েছে ৩৫ হাজার ১০০ টন।