নির্বাচনী জোট ও মনোনয়ন কৌশল নিয়ে তারেক রহমানের বক্তব্য

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৩:৪৩ অপরাহ্ণ   |   ৪৭ বার পঠিত
নির্বাচনী জোট ও মনোনয়ন কৌশল নিয়ে তারেক রহমানের বক্তব্য

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। সাক্ষাৎকারে তিনি নির্বাচন, সম্ভাব্য জোট, ও প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত মতামত দেন।


নির্বাচন এককভাবে না জোটগতভাবে?

বিবিসি বাংলা: অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকেই বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এখন সরকার ও নির্বাচন কমিশন ফেব্রুয়ারিতে ভোটের সময়সূচি দিয়েছে—এ বিষয়ে আপনাদের আস্থা কতটা?
 

তারেক রহমান:
বিএনপি সব সময় বলেছে—যত দ্রুত নির্বাচন হবে, তত দ্রুত দেশ স্থিতিশীলতার পথে ফিরবে। গত ১৭ বছর ধরে জনগণ তাদের রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে, পাশাপাশি অর্থনৈতিক সুযোগ থেকেও বঞ্চিত ছিল। এর ফলেই সমাজে বেকারত্ব, দারিদ্র্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অবনতি—সব মিলিয়ে এক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

 

আমরা বিশ্বাস করি, যখন জনগণের হাতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ফিরবে—অর্থাৎ দেশের প্রকৃত মালিকরা আবার তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে—তখন দেশ আবার স্থিতিশীল হবে। নির্বাচনের পর সব সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান না হলেও একটি সঠিক পথে অগ্রযাত্রা শুরু হবে।
 

আমরা খুশি যে সরকার অবশেষে বিষয়টি উপলব্ধি করেছে। যদিও আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছিলাম, সরকার এখন ফেব্রুয়ারিতে আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে—আমরা আশা করছি, তারা যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।


জোটবদ্ধ না এককভাবে নির্বাচন?

বিবিসি বাংলা: বিএনপি কি এককভাবে নির্বাচন করবে, নাকি আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে জোটবদ্ধভাবে অংশ নেবে?
 

তারেক রহমান:
এটি কিছুটা ‘ট্রিকি’ প্রশ্ন। দেখুন, গত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রায় ৬৪টি রাজনৈতিক দল রাজপথে সক্রিয় ছিল। আমরা সবাই মিলে কাজ করার চেষ্টা করেছি। বিএনপি ২০১৬ সালে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জন্য ৩১ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল—যা পরবর্তীতে উন্নত করে ২৭ দফা এবং পরে আবারও ৩১ দফা হিসেবে যৌথভাবে প্রণয়ন করা হয়।

 

আমাদের উদ্দেশ্য ছিল—যেসব দল আন্দোলনে আমাদের পাশে ছিল, তাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজ করা। আমরা চাই, রাষ্ট্র পরিচালনায় সব অংশীজনের মতামত প্রতিফলিত হোক।
 

বিবিসি বাংলা: তাহলে মিত্র কারা হবেন?

তারেক রহমান:
আমরা চাই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে। যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, তারাই আমাদের স্বাভাবিক সহযোগী।


জামায়াতের পৃথক জোট গঠনের ইঙ্গিত

বিবিসি বাংলা: জামায়াতে ইসলামী কিছু দল নিয়ে বিএনপি-বিরোধী জোট গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছে। এটি কি আপনাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়?
 

তারেক রহমান:
না, মোটেও না। বাংলাদেশের আইন ও সংবিধানের মধ্যে থেকে যে কেউ রাজনীতি করতে পারে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। গণতন্ত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বাভাবিক বিষয়। বিএনপি অতীতেও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।


মনোনয়ন কৌশলে নতুনত্ব কী?

বিবিসি বাংলা: অতীতে অভিযোগ ছিল—মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় টাকার প্রভাব, পারিবারিক বিবেচনা বা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর প্রভাব থাকে। এবার কি ভিন্ন কিছু হবে?
 

তারেক রহমান:
আমরা কখনোই এসব বিবেচনায় প্রার্থী মনোনয়ন দিইনি। আগামীতেও দেব না। আমরা চাই প্রতিটি এলাকায় এমন প্রার্থী দিতে, যিনি এলাকার মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের সমস্যা বোঝেন এবং সমাধানে সক্ষম।

 

তরুণ, নারী, প্রবীণ ও ছাত্রদের সঙ্গে যাঁর নিয়মিত যোগাযোগ আছে, যাঁর প্রতি জনগণের আস্থা ও সমর্থন রয়েছে—এমন ব্যক্তিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অর্থাৎ জনগণের সমর্থনই হবে প্রধান বিবেচনা।


তৃণমূলের মতামতের গুরুত্ব

বিবিসি বাংলা: অভিযোগ আছে, তৃণমূলের মতামত অনেক সময় উপেক্ষিত হয়। এবার কি সেটি ভিন্ন হবে?
 

তারেক রহমান:
তৃণমূলের মতামত আমরা সব সময়ই গুরুত্ব দিই। গণতন্ত্রে বিভিন্ন মতামত থাকা স্বাভাবিক। কোনো এলাকায় ৫০ জনের মধ্যে ৩০ জন এক কথা বললে, ১৫ জন আরেক কথা বলতেই পারে—তাতে মতামত নেওয়া বন্ধ হয় না।

 

আমরা মেজরিটির মতামত ও জনগণের বাস্তব চাহিদা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিই। এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট—আমরা দলের নেতা নির্বাচনের জন্য নয়, বরং এমন প্রার্থী খুঁজছি যিনি দলমত নির্বিশেষে এলাকার অধিকাংশ মানুষের সমর্থন অর্জন করেছেন।
 

নির্বাচন কেবল দলীয় সমর্থনে হয় না—সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণই মূল বিষয়। তাই আমরা এমন মানুষকেই প্রাধান্য দেব, যার প্রতি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আস্থা রয়েছে।


তারেক রহমানের মতে, বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে, এবং দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে জনগণের ভোটের মাধ্যমে একটি বৈধ সরকারই একমাত্র পথ। তিনি স্পষ্ট করে জানান, প্রার্থী বাছাইয়ে এবার জনগণের মতামত ও স্থানীয় গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রধান বিবেচনা করা হবে।