ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করেছে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন

প্রকাশকালঃ ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:১৬ অপরাহ্ণ ১৭০ বার পঠিত
ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ  করেছে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন

মিল মালিকরা ভোজ্য তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সার্বিক দিক বিবেচনা করে মিল মালিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আপাতত দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তাই প্রতি লিটার সয়াবিন তেল আগের মতোই ১৬৩ টাকায়ই বিক্রি করতে হবে। ট্যারিফ কমিশন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।


সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আপাতত নাকচ করা হলেও ভোজ্য তেলের মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে কমিশন তার নিজস্ব পর্যালোচনা অব্যাহত রেখেছে। আজ বৃহস্পতিবারও কমিশন নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে একটি প্রস্তাব চূড়ান্ত করে সেটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্য তেলের দামের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তবে ব্যবসায়ীরা লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে ট্যারিফ কমিশন অসম্মতি জানালেও মাঝামাঝি অঙ্কের টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারে। সেটা হতে পারে লিটারপ্রতি পাঁচ থেকে সাত টাকা।


গতকালের বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ট্যারিফ কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা মিল মালিকদের পরিষ্কার বলে দিয়েছি, সব দিক পর্যালোচনা করে এখন ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তাই তাঁরা লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেটি নাকচ করা হলো। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি লিটার সয়াবিন তেল আগের দামেই, অর্থাৎ ১৬৩ টাকায়ই বিক্রি হবে। মিল মালিকরাও এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন।’


তবে গতকালের বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব নাকচ করা হয়নি। আসলে এ বিষয়ে আরো আলোচনা হবে ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। সে সময় পর্যন্ত ভোজ্য তেলের বর্ধিত মূল্য কার্যকর হবে না এবং মিল মালিকরাও বর্ধিত মূল্যের লেবেলসংবলিত তেলের বোতল বাজারে ছাড়বে না। অর্থাৎ আমরা ১৬ এপ্রিল থেকে ভোজ্য তেলে লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর যে ঘোষণা দিয়েছিলাম সেটি আপাতত স্থগিত থাকবে।


তবে সরকার যেহেতু ৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফের মেয়াদ আর বাড়ায়নি এবং এরই মধ্যে বিশ্ব বাজারেও বাড়তে শুরু করেছে সয়াবিন-পাম অয়েলের দাম, তাই আমাদের দাবি সব দিক বিবেচনা করে দ্রুত ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।’


এদিকে বিশ্ববাজারে গত টানা পাঁচ মাস দাম কমেছে সয়াবিন তেলের। প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে গত নভেম্বরে ছিল এক হাজার ১১৮ ডলার। সর্বশেষ গত মার্চ মাসে সে দাম কমে হয়েছে ৯১০ ডলার। অর্থাৎ গত পাঁচ মাসে বিশ্ববাজারে টন প্রতি সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ২০৮ ডলার। অথচ দেশের বাজারে ঘটছে ঠিক তার উল্টো চিত্র। ৫ শতাংশ ভ্যাট ছাড়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা বলে ভোজ্য তেল শোধনকারী মিল মালিকরা সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে লিটারে ১০ টাকা দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত মঙ্গলবার থেকেই এই দাম কার্যকর করারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।


গত সোমবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে আবারও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। বলা হয়, লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭৩ টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে ভোজ্য তেলের কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন পর্যায়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে জারিকৃত এসআরওদ্বয়ের মেয়াদ ১৫ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে শেষ হচ্ছে বিধায় আগামী ১৬ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ থেকে বাজারে ভোজ্য তেল (পরিশোধিত পাম তেল ও পরিশোধিত সয়াবিন তেল) সরবরাহে ভ্যাট অব্যাহতি পূর্ববর্তী মূল্যে পণ্য সরবরাহ হবে।’


এতে আরো বলা হয়েছে, ‘উল্লিখিত বিষয়ের আলোকে আগামী ১৬ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ থেকে ভোজ্য তেলের মূল্য নিম্নলিখিতভাবে কার্যকর হবে। বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ১৭৩ টাকা, পাঁচ লিটার ৮৪৫ টাকা এবং খোলা এক লিটার পাম তেলের দাম ১৩২ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।’