প্রকাশকালঃ
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৩:৩১ অপরাহ্ণ ৩৪৩ বার পঠিত
মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শে আছে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ। তিনি আমাদের ছোট-বড় সব বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার শিষ্টাচারও তিনি আমাদের শিখিয়েছেন। সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার তাঁকে বলা হলো, তোমাদের নবী (সা.) তোমাদের সব কাজই শিক্ষা দেন, এমনকি প্রস্রাব-পায়খানার পদ্ধতিও! তিনি বলেন, হ্যাঁ, তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন, পায়খানা বা প্রস্রাবের সময় কিবলামুখী হয়ে বসতে, ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য করতে, তিনটি ঢিলার কম দিয়ে শৌচকার্য করতে এবং গোবর বা হাড় দিয়ে শৌচকার্য করতে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৯৯)
বসে প্রস্রাব করা সুন্নাত
রাসুলুল্লাহ (সা.) মানবীয় প্রয়োজন পূরণে শরীর ও স্বাস্থ্যের আরামের প্রতি লক্ষ রেখেছেন। প্রিয় নবী (সা.)-এর অন্যতম একটি সুন্নাহ হচ্ছে বসে প্রস্রাব করা। নতুন প্রজন্মের অনেককেই দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে দেখা যায়। অথচ নবীজি (সা.) দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘কেউ যদি তোমাদের বলে যে রাসুল (সা.) দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতেন, তবে তোমরা তা সত্য বলে বিশ্বাস কোরো না। তিনি বসা ছাড়া প্রস্রাব করতেন না।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১২)
এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বসে প্রস্রাব করতেন। সুতরাং এটাই হওয়া উচিত মুসলিম উম্মাহর অনুকরণীয় আমল।
দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা বিজাতীয় অনুসরণ
অনেকেই মনে মনে ভাবে বা এ কথা বিশ্বাস করে যে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করাই সভ্যতা ও ভদ্রতা। অথচ মুসলমানদের জন্য উচিত হলো, মহানবী (সা.)-এর সুন্নাহর অনুসরণ করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহের প্রতি বিমুখ, সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৭৭৬)
বসে প্রস্রাব করা স্বাস্থ্যসম্মত
চিকিৎসকরা বলেন এবং বাস্তবেও এ কথা প্রমাণিত যে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার ফলে প্রস্রাবের থলি সরু ও লম্বা হয়ে ঝুলতে থাকে। এর কারণে প্রস্রাবের দূষিত পদার্থগুলো সেই থলির নিচে জমা হয়ে যায়। কিন্তু কেউ যদি বসে প্রস্রাব করে তাহলে বসার কারণে সেই থলিতে চাপ লাগে, এর ফলে সহজেই সেই দূষিত পদার্থগুলো বের হয়ে যায়।
জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ
যারা নিয়মিত দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে, তারা বার্ধক্যে নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। কারণ দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার কারণে পেটের ওপর কোনো ধরনের চাপ পড়ে না। আর এই চাপ না পড়ার কারণে পেটের ভেতরে যদি কোনো দূষিত বায়ু থাকে তা ওপরের দিকে উঠে যায়। এবং এটি রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের স্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। এভাবে সব সময় যদি চলতে থাকে, শেষ বয়সে জটিল রোগে আক্রান্ত হতে হয়।
তা ছাড়া প্রস্রাব হলো রোগ-জীবাণু দ্বারা পরিপূর্ণ একটি পদার্থ। কখনো তার মধ্যে রোগের কারণে মূত্রদ্বারে জ্বালাপোড়া, পুঁজ, রক্ত নির্গত হওয়া, কিডনিতে ইনফেকশন ইত্যাদি থাকায় তা প্রস্রাবের সঙ্গেও থাকে। অতএব, দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে তার ছিটা শরীর ও কাপড়চোপড়ে লেগে যায়।
বিশেষ অবস্থায় দাঁড়িয়ে প্রস্রাব
কেউ যদি অসুস্থ হয় কিংবা বসার মতো সুন্দর জায়গা না থাকে, সে ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার অনুমতি আছে। তবে এটি অভ্যাসে পরিণত করা যাবে না। তাই শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা মাকরুহ; আর এটাই হানাফি মাজহাবের অভিমত। (শামি : ১/৩৪৪, আলমগিরি : ১/৫০)
হুজাইফা (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) একবার গোত্রের আবর্জনা ফেলার স্থানে এলেন। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলেন। তারপর পানি চাইলেন। আমি তাঁকে পানি নিয়ে দিলাম। তিনি অজু করলেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২২৪)