মানুষের আসল সম্পদ কোনটি

প্রকাশকালঃ ০৬ মে ২০২৩ ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ ৪০৪ বার পঠিত
মানুষের আসল সম্পদ কোনটি

মানুষ জীবনে যে অর্থ উপার্জন করে, ব্যয় করে এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করে এর মধ্যে তার প্রকৃত সম্পদ কোনটি? যা ব্যয় করল সেটি? না যা সে সংরক্ষণ করল? যদিও সাধারণ মানুষের ধারণা সংরক্ষিত সম্পদই তার সম্পদ। তবে হাদিসের ভাষ্য এর বিপরীত। আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে, যার কাছে নিজ সম্পত্তির চেয়ে তার ওয়ারিশদের সম্পত্তিই অধিক প্রিয়? সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের প্রত্যেকের কাছে তার নিজের সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের সম্পত্তির চেয়ে অধিক প্রিয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জেনে রেখো! তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নাই, যার কাছে তার নিজ সম্পত্তি অপেক্ষা তার ওয়ারিশদের সম্পত্তি অধিক প্রিয় নয়। তোমার সম্পত্তি হলো যা তুমি অগ্রিম প্রেরণ করেছ। আর তোমার ওয়ারিশদের সম্পত্তি হলো যা তুমি রেখে দিয়েছ। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৪২)

আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) সম্পদ পুঞ্জীভূত না করে নিজের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন। কেননা মানুষ যে সম্পদ ওয়ারিশদের জন্য রেখে যায়, তা তাঁর কল্যাণে ব্যয় হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। কিন্তু মানুষ যে সম্পদ নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, কল্যাণকর কোনো কাজে, আল্লাহর পথে ব্যয় করে সেটাই প্রকৃতপক্ষে তার সম্পদ। এগুলোই ইহকালে ও পরকালে তার উপকারে আসবে। অথচ বেশির ভাগ মানুষ তার রেখে যাওয়া সম্পদকে নিজের সম্পদ মনে করে।


তবে এর অর্থ এই নয় যে ইসলাম পরিবারবর্গ ও সন্তান-সন্তুতিকে নিঃস্ব করে যেতে বলে। ইসলাম পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে পরিবারের জন্য রেখে যাওয়া সম্পদকে কল্যাণ বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন তোমরা কোনো কল্যাণ (সম্পদ) রেখে গেলে তার ব্যাপারে পিতা-মাতা ও স্বজনদের জন্য ন্যায়সংগতভাবে অসিয়ত করে যাওয়া তোমাদের জন্য ফরজ করা হলো। আল্লাহভীরুদের জন্য এটা দায়িত্ব।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮০)


আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি সন্তানদের জন্য ৬০ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) পরিমাণ অর্থ রেখে যায়নি, সে ভালো পরিমাণ সম্পদ রেখে যায়নি। আর তাউস (রহ.) এর পরিমাণ ৮০ দিনার বলেছেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ১/৮৯)

সুতরাং মুমিনের দায়িত্ব হলো অর্থ ব্যয় ও সংরক্ষণে ভারসাম্য রক্ষা করা। সে যেমন নিজের পরকালীন কল্যাণকে উপেক্ষা করবে না, তেমনি সন্তানদের নিঃস্ব রেখে যাবে না।