যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রত্যাখ্যানের’ পর ইউক্রেন রক্ষায় নতুন জোট

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৪ মার্চ ২০২৫ ১২:৫৫ অপরাহ্ণ   |   ৮০ বার পঠিত
যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রত্যাখ্যানের’ পর ইউক্রেন রক্ষায় নতুন জোট

অনলাইন ডেস্ক:-

 

যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত অবস্থানের প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন এক জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। এই জোটে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পাশাপাশি, তারা যুক্তরাষ্ট্রকে এই উদ্যোগে যুক্ত করার চেষ্টা চালাবে। ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ও রাশিয়ার প্রভাব থেকে ইউক্রেনকে রক্ষার লক্ষ্যে স্টারমার চার দফা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। লন্ডনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক সম্মেলনের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণা দেন।
 

সম্মেলনে স্টারমার বলেন, ‘আমরা ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি।’ অন্যদিকে, জেলেনস্কি জানান, তিনি ‘শক্তিশালী সমর্থন’ অনুভব করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এই সম্মেলনে ইউরোপীয় ঐক্যের সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, যা বহুদিন দেখা যায়নি।’ এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যকার বাকবিতণ্ডার মাত্র দুই দিন পর। জেলেনস্কি বলেন, ‘একটি সত্যিকারের শান্তি ও নিশ্চিত নিরাপত্তার জন্য আমরা ইউরোপে সবাই একসঙ্গে কাজ করছি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার ভিত্তি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
 

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্টারমার ইউক্রেনের জন্য অতিরিক্ত দুই বিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন, যা দিয়ে পাঁচ হাজার আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হবে। এর আগে যুক্তরাজ্য রাশিয়ার জব্দকৃত সম্পদের মুনাফা থেকে ২.২ বিলিয়ন পাউন্ডের সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। স্টারমার বলেন, ‘আমাদের অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমরা এমন কোনো দুর্বল চুক্তি করতে পারি না, যা রাশিয়া সহজেই লঙ্ঘন করতে পারে। আমাদের চুক্তি হতে হবে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল।’
 

তবে ‘কোয়ালিশন অব উইলিং’ নামে পরিচিত এই প্রস্তাবিত জোটে কোন কোন দেশ যুক্ত হতে রাজি হয়েছে, সে বিষয়ে স্টারমার বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি কেবল বলেছেন, যারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তারা জরুরি ভিত্তিতে কাজ করবেন এবং যুক্তরাজ্য তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। এ উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রয়োজন হবে, তবে রাশিয়াকে কোনো শর্ত নির্ধারণের সুযোগ দেওয়া হবে না। ট্রাম্প ও জেলেনস্কির সাম্প্রতিক বাকবিতণ্ডার প্রসঙ্গে স্টারমার বলেন, ‘গত শুক্রবার যা ঘটেছে, তা কেউ দেখতে চায়নি। তবে আমি মনে করি না যে যুক্তরাষ্ট্র একজন অবিশ্বস্ত সহযোগী।’
 

এই সম্মেলনে ফ্রান্স, পোল্যান্ড, সুইডেন, তুরস্ক, নরওয়ে, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়া, ফিনল্যান্ড, ইতালি, স্পেন ও কানাডা অংশ নেয়। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েনও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ইউরোপকে পুনরায় সামরিকভাবে শক্তিশালী করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট্টেও এই অভিমত প্রকাশ করেন।
 

রয়টার্স জানায়, ইউক্রেনে কিছু ক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতির জন্য ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য এক মাসের সাময়িক বিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, বিমান, সাগর ও জ্বালানি স্থাপনায় আক্রমণ বন্ধ থাকবে, তবে স্থলযুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ইমানুয়েল মাখোঁ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ ধরনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে বোঝা যাবে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সত্যিকার অর্থে বিশ্বাসযোগ্য চুক্তির প্রতি কতটা প্রতিশ্রুতিশীল।
 

ইউক্রেন তার ভূমি ছাড়বে না: জেলেনস্কি ওভাল অফিসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার পরও কূটনৈতিক সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে রুদ্ধদ্বার আলোচনা প্রয়োজন।’ তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, কোনো চুক্তির আওতায় ইউক্রেন তার ভূখণ্ড ছাড়বে না। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত চুক্তিতে সম্মতির ইঙ্গিত দেন তিনি।
 

পুতিনের সঙ্গে কথা হয়েছে: ট্রাম্প এদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নিজের কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি মনে করি, তিনি যুদ্ধ বন্ধ করতে চান। আমরা আবারও কথা বলেছি।’ সোমবার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প জানিয়েছেন, পুতিন যুদ্ধের অবসান চান। এই মন্তব্যের মাধ্যমে ট্রাম্প আবারও পুতিনের প্রতি ইতিবাচক অবস্থান প্রকাশ করেছেন।