নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম:
বিশ্বজুড়ে কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যাচ্ছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন, প্রচলিত সংবাদমাধ্যমের সঙ্কট নিরসনে নতুন প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক তথ্যপ্রবাহ গ্রহণ করা জরুরি। দমন-পীড়ন ও নিয়ন্ত্রণের মানসিকতা বর্জন না করলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে “মুক্ত গণমাধ্যম ও আগামীর চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব। সভাপতিত্ব করেন বাসসের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ।
মাহবুব মোর্শেদ বলেন, বিশ্বব্যাপী কর্পোরেট মিডিয়ার ওপর আস্থাহীনতা তৈরি হওয়ায় বিবিসির মতো প্রতিষ্ঠানও ‘মোজা’ (মোবাইল জার্নালিজম) চালু করেছে। কারণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কাঁচা কিন্তু বাস্তব ভিডিও বা তথ্য মানুষ আরও বিশ্বাস করে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মোবাইল ও নন-কনভেনশনাল মিডিয়ার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত বাস্তবমুখী। কিন্তু আমরা এখনো নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তিনির্ভর সংবাদমাধ্যমকে গ্রহণ করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত নই।
তিনি বলেন, “দমন, পীড়ন, নিয়ন্ত্রণ, বন্ধ করে দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগোলে গণতন্ত্র প্রসার পাবে না। নতুন বাংলাদেশে আমাদের হতে হবে আরও উন্মুক্ত ও গণতান্ত্রিক।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, কর্পোরেট বিনিয়োগনির্ভর প্রচলিত পত্রিকা ও টেলিভিশনের মালিকভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ গণমাধ্যমের সত্য প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে প্রচলিত গণমাধ্যমের ভূমিকা ছিল হতাশাজনক—বেশিরভাগ গণমাধ্যম সরকারি প্রচারের মুখপাত্রে পরিণত হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই আসল তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়।
আলোচনার বিশেষ অতিথি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এস. এম. নসরুল কদির বলেন, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও ‘মুক্ত গণমাধ্যম’ নিয়ে আলোচনা করতে হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে সৎ থাকলেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
মুখ্য আলোচক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক বলেন, অবাধ তথ্যের নামে অপবাদ, মিথ্যাচার ও অপতথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র—উভয়কেই সমান্তরালে চলতে হয়।
ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আলী আর রাজী। তিনি বলেন, ‘মুক্ত গণমাধ্যম’ ও গণতন্ত্র একে অপরের পরিপূরক—এদের পারস্পরিক নির্ভরতা ছাড়া কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আব্দুস সাত্তার, সিএমইউজের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম মো. জানে আলমসহ বিভিন্ন সাংবাদিক ও পেশাজীবীরা। সঞ্চালনায় ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য গোলাম মাওলা মুরাদ।