খুলনা প্রতিনিধি:-
ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের পর খুলনা নগরীর ময়লাপোতা ও শিববাড়ি এলাকায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় বন্ধ হয়ে গেছে কেএফসি, ডোমিনোজ পিজা এবং বাটার শোরুম। এসব প্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং কবে নাগাদ পুনরায় চালু হবে—তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ময়লাপোতা মোড়ের বহুতল ভবনে অবস্থিত কেএফসির দোতলা শাখা এবং নিচতলার ডোমিনোজ পিজায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। কেএফসির কর্মকর্তারা জানান, খাবার লুট করে নেওয়ার পাশাপাশি সাইনবোর্ড, চেয়ার-টেবিল, টিভি, এসি, ফ্রিজ, ক্যাশ কাউন্টার—সবকিছুই ভাঙচুর করা হয়েছে। নগদ অর্থও নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এখন অনিশ্চয়তায়।
কেএফসির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সুজন মণ্ডল বলেন, "আমাদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ চলছে। মামলা করার প্রস্তুতিও চলছে। তবে কবে নাগাদ আবার চালু হতে পারব, বলা যাচ্ছে না।"
ডোমিনোজ পিজার চিত্রও একই। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মো. আলামিন জানান, "সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। আমাদের কিছুই অবশিষ্ট নেই। কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কবে চালু হতে পারব, তা এখনই বলা কঠিন।"
শিববাড়ি মোড়ের বাটার শোরুমেও চালানো হয়েছে একই ধরণের হামলা। ভাঙচুর করে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে আসবাবপত্র, কাচ ও পণ্যসামগ্রী। শোরুম ঘিরে রাখা হয়েছে ত্রিপল দিয়ে। ভেতরে কাচের স্তূপ ও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জুতা-স্যান্ডেল চোখে পড়ে।
ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, "আমাদের আনুমানিক ৯০ থেকে ৯৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মামলা করা হবে। তবে প্রতিষ্ঠান আবার চালু করতে কত সময় লাগবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।"
ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনায় পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়ে ৩১ জনকে আটক করেছে। তারা এখন সোনাডাঙ্গা থানায় আটক রয়েছেন। তবে কয়েকটি পরিবার অভিযোগ করেছে, নিরীহ ব্যক্তিদেরও আটক করা হয়েছে।
ছোট বয়রা এলাকার মনির হোসেন অভিযোগ করেন, তার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে হৃদয়কে দাদা বাড়ি থেকে ফেরার পথে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। একই অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আমির হোসেন, যার ছেলে ইরফানকেও পুলিশ আটক করেছে।
রেকশাচালক আশরাফুলের স্ত্রী জানান, কোনো কারণ ছাড়াই তার স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, "সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যারা জড়িত তাদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিরীহ কাউকে ধরা হয়নি।"
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, "ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"