ভারি বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত চকরিয়ার

প্রকাশকালঃ ০৭ আগu ২০২৩ ১২:২০ অপরাহ্ণ ১৯২ বার পঠিত
ভারি বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত চকরিয়ার

টানা তিন দিনের ভারি বর্ষণে কক্সবাজারের চকরিয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে মাতামুহুরী নদীতে। ইতিমধ্যে নদীর দুই তীর উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে বানের পানি। 

এতে মাতামুহুরী নদীর দুই তীরে বসবাসকারী পরিবারগুলোর মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তার ওপর একনাগাড়ে ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় যেকোনো মুহূর্তে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে চকরিয়ায়।

এদিকে টানা ভারি বর্ষণের কারণে ব্যাপকভাবে পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী লোকজন যাতে নিরাপদে সরে যায় সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। সতর্কবার্তা দিয়ে মানুষকে সচেতন করার কর্মসূচিও চলছে।


অন্যদিকে বর্ষণ অব্যাহত থাকায় ইতিমধ্যে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। এতে আমন ধান ও সবজির আবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীবিধৌত ইউনিয়ন বমু বিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, কোনাখালী, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ইতিমধ্যে কয়েক ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাতামুহুরী নদীতীরের ১ নম্বর গাইডওয়ালও হুমকির মুখে রয়েছে। নদীতে পানির চাপ বাড়তে থাকায় যেকোনো মুহূর্তে তীরের গাইডওয়াল ভেঙে ব্যাপকভাবে লোকালয়ে বানের পানি ঢুকে পড়তে পারে।

এ ছাড়া নানা কারণে ছড়াখালগুলো ভরাট হয়ে পড়ায় দ্রুত ভাটির দিকে পানি নামতে পারছে না। এর ওপর অব্যাহতভাবে চলছে ভারি বর্ষণ। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলোও চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এখনো বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে না ঢুকলেও যেকোনো সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।


সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম জানান, পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি আজ রবিবার বিকেল থেকে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে।

এতে কয়েকটি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

চকরিয়ার বেড়িবাঁধ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জামিল মোরশেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাতামুহুরী নদীতে বিপৎসীমা অতিক্রম করেই প্রবাহিত হচ্ছে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি। এ অবস্থায় হুমকির মুখে রয়েছে কোনাখালীর কাইজ্জারদিয়া, সিকদার পাড়ার বেড়িবাঁধ। একইভাবে খুটাখালী ইউনিয়নের সমুদ্র উপকূলের বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তবে বেড়িবাঁধগুলোর যেসব পয়েন্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে সেসব পয়েন্টে লোক নিয়োগ করে জরুরি কাজ করা হচ্ছে। যাতে ভাঙনের কবলে না পড়ে।’


উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি কালের কণ্ঠকে জানান, এবারের অতি বর্ষণের কারণে ইতিমধ্যে ইউনিয়নগুলোর নিম্নাঞ্চল কয়েক ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। সেই সাথে আমন ধানের রোপণকৃত চারা এবং রকমারি সবজিক্ষেতও পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় কৃষিক্ষেত্রেও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, কৃষি বিভাগ ব্লক অনুযায়ী সার্বিক চিত্র সংগ্রহ করছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো ক্ষতির চিত্র পাওয়া না গেলেও উপজেলার নিম্নাঞ্চলের আমন ধান ও সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জে পি দেওয়ান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে বন্যার পূর্বাভাসের বিষয় জানিয়ে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকায় বসবাসকারী লোকজন যাতে নিরাপদে সরে যায় সে জন্য মাইকিংও করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’