পানির সংকটে পাহাড়ি জনপদ, শুকিয়ে মরছে ছড়া

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৩ মার্চ ২০২৫ ১২:৫৮ অপরাহ্ণ   |   ৮৯ বার পঠিত
পানির সংকটে পাহাড়ি জনপদ, শুকিয়ে মরছে ছড়া

নেত্রকোনা প্রতিনিধি:-

 

নেত্রকোনার কলমাকান্দার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে ভয়াবহ পানি সংকটে ভুগছেন হাজারো মানুষ। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই শুরু হয়েছে বিশুদ্ধ পানির জন্য সংগ্রাম। পাহাড়ি ছড়াগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাইকে মাইলের পর মাইল হাঁটতে হচ্ছে পানির সন্ধানে।

 

চন্দ্রডিঙা গ্রামের ছয় বছরের শিশু জান্নাতুল ফেরদৌস প্রতিদিন মায়ের সঙ্গে পানি সংগ্রহে আসে। সকাল-বিকেল দুইবার তাকে যেতে হয় পাহাড়ি ছড়ার পাশে খোঁড়া কুয়া থেকে পানি আনতে। কারণ, সরকারিভাবে স্থাপিত গভীর নলকূপগুলোর পানি আয়রনযুক্ত, যা পান উপযোগী নয়। বাধ্য হয়েই স্থানীয়রা ছড়া, খাল বা কুয়ার পানির ওপর নির্ভর করছেন।

 

উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, কলমাকান্দার সীমান্তবর্তী রংছাতি, খারনৈ ও লেংগুরা ইউনিয়নের প্রায় ৩৫টি গ্রামে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। এখানকার গারো, হাজং ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা পাহাড়ি ছড়ার পানির ওপর নির্ভরশীল। শুষ্ক মৌসুমে ছড়াগুলো শুকিয়ে গেলে গভীর নলকূপই একমাত্র ভরসা। কিন্তু ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে অতিরিক্ত আয়রনের উপস্থিতি মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

 

চন্দ্রডিঙা গ্রামের গৃহিণী রীতা মারাক বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। আগে গভীর নলকূপের পানি আনতাম, কিন্তু এখন সেখানে প্রচুর আয়রন। বাধ্য হয়ে নালার পানি খাই। শুকনো মৌসুমে পানি পেতে অনেক কষ্ট হয়।’
 

লেংগুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান ভূঁইয়া জানান, কাঁঠালবাড়ী, গোপালবাড়ী ও ফুলবাড়ীসহ বেশ কিছু গ্রামে বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে পৌঁছেছে। তাঁর ভাষায়, ‘বিগত সরকারের আমলে সীমান্ত এলাকায় গভীর নলকূপ বসানোর সময় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে, যার ফলে মানুষ এখনও বিশুদ্ধ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত।’

 

কলমাকান্দা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় পাথরের স্তর থাকায় গভীর নলকূপ বসানো কঠিন। তারপরও কয়েকটি গভীর কূপ স্থাপন করা হয়েছে। তবে ভূগর্ভস্থ স্তরে সমস্যা থাকায় এসব কূপের পানিতে আয়রনের মাত্রা বেশি।’
 

নেত্রকোনা জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান জানান, ‘কলমাকান্দার সীমান্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সমস্যা অনেকটাই দূর হবে।’