কণ্ঠশীলনের নতুন নাটক ‘তাজমহলের টেন্ডার’

প্রকাশকালঃ ০৬ জুন ২০২৩ ০১:৩৯ অপরাহ্ণ ১৬০ বার পঠিত
কণ্ঠশীলনের নতুন নাটক ‘তাজমহলের টেন্ডার’

সেছে কণ্ঠশীলনের নতুন নাটক তাজমহলের টেন্ডার। সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে এই নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। ভারতীয় নাট্যকার অজয় শুল্কার লেখা নাটকটির অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী। নির্দেশনা দিয়েছেন কণ্ঠশীলন অধ্যক্ষ মীর বরকত। সোমবার সন্ধ্যায় নাটকটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান নাট্যজন লাকী ইনাম।

নাটকটিতে দেখা যায়, বাদশাহ শাহজাহান তাঁর স্ত্রী মমতাজের স্মৃতি রক্ষার্থে তাজমহল বানানোর ভার দিলেন চিফ ইঞ্জিনিয়ার গুপ্তাজীকে। ধুরন্ধর গুপ্তাজী ও তাঁর সহকারী সুধীর ব্যবসায়ী ভাইয়াজীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে শাহজাহানকে ভুল বোঝাতে লাগলেন। তাঁরা নানান কৌশলে বাদশাহর চোখে ধুলা দিয়ে তাজমহল বানানোর আগেই বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ এবং তা আত্মসাৎ করতে লাগলেন। বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাব্যক্তি এবং শ্রমিক নেতারাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবৈধ সুবিধা ভোগের মাধ্যমে গুপ্তাজীর অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করতে থাকেন। এসব কারণে সম্রাটের আকাঙ্ক্ষা পূরণে চরম বিঘ্ন ঘটতে শুরু করে এবং তাজমহল নির্মাণে সময়ক্ষেপণ হতে লাগল। শাহজাহান হতাশ হতে লাগলেন আর ভাবতে থাকলেন তাঁর স্বপ্ন কি অধরাই থেকে যাবে? হ্যাঁ, ২৫ বছর শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তাজমহলের টেন্ডার বের হয় না। তবে মৃত্যুর পূর্বে সম্রাট শাহজাহান গুপ্তাজীর ধোঁকাবাজি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তাঁর জারি করা শাহি ফরমানবলে গুপ্তাজী এবং তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়। নাটকের মাধ্যমে সবার চাওয়া, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অসুস্থ সমাজের স্তরে স্তরে সংঘটিত সব ধরনের দুর্নীতির অবসান হোক।


নাটক সম্পর্কে নির্দেশক মীর বরকত বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক সফিকুন্নবী সামাদী উর্দু-হিন্দি সাহিত্য অনুবাদে সিদ্ধহস্ত। একটি হাস্যরসাত্মক নাটক অনুবাদের জন্য তাঁকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। নাট্যকার অজয় শুক্লার “তাজমহল কা টেন্ডার” নাটকটি দ্রুত অনুবাদ করে তিনি আমাদের হাতে তুলে দেন। প্রথম পাঠেই দলের সদস্যরা নাটকটি পছন্দ করেন। 

একটি ঐতিহাসিক বিষয়কে অবলম্বনের মাধ্যমে কাল্পনিক কাহিনির পরম্পরা সাজিয়ে নাটকটিকে হাস্যরসাত্মক ও চিরন্তন করে তুলেছেন নাট্যকার অজয় শুক্লা। সামাদীর সহজ সরল অনুবাদকে কাজে লাগিয়ে অভিনেতারা কমেডি ধাঁচের অভিনয়ের মাধ্যমে হাস্যরস ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।’

১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের নাটকটির সংগীত পরিকল্পনা ও সুরে মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন অসীম কুমার নট্ট; আলো-আঁধারের খেলায় উতরে গেছেন আলোক পরিকল্পক অম্লান বিশ্বাস; কোরিওগ্রাফি ও ডিজাইনে আমিনুল আশরাফ ও তাহরিমা প্রিয়াঙ্কা অনেক ভালো কাজ করেছেন; মঞ্চসজ্জা, পোশাক ও প্রপস দিয়ে প্রাসঙ্গিকতা ফুটিয়ে তুলেছেন লিয়া। এ ছাড়া সমসাময়িক বিষয়ে দুটি র‌্যাপ গান লিখেছেন মীর বরকত।


নাটকটির প্রধান চরিত্র গুপ্তাজী ও গুপ্তাজীর সহকারী সুধীরের চরিত্রে সোহেল রানা ও সালাম খোকন নাটকটিকে এগিয়ে নিয়েছেন; সঙ্গে ছিলেন সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ী ভাইয়াজীর চরিত্রে জে এম মারুফ সিদ্দিকী। বাদশাহ শাহজাহান ও বেগম মমতাজের ভূমিকায় ছিলেন মোস্তফা কামাল ও আইরিন খানম। দরবারীর চরিত্রে ছিলেন আহমাদুল হাসান, শফিকুল ইসলাম এবং আল মামুন সিদ্দিক। রাজনৈতিক নেতার চরিত্রে অনন্যা গোস্বামী ও অপরেশ সাহা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভিজিল্যান্স কর্মকর্তা হিসেবে শফিক সিদ্দিকী, পরিবেশ কর্মকর্তা রূপে নিবিড় রহমান ও অ্যাকাউন্টসে মো. আবদুল কাইয়ুম দুর্নীতি-ঘুষ বাণিজ্যের রূপ তুলে এনেছেন। চাপরাজী ও পত্রিকাওয়ালা হিসেবে ইকবাল হোসেন মানুষকে আনন্দ দিয়েছেন।

আবৃত্তির সংগঠন হিসেবে পরিচিত হলেও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনভুক্ত কণ্ঠশীলন ১৯৯৩ সাল থেকে নিয়মিত মঞ্চনাটক প্রযোজনা করছে। কণ্ঠশীলন প্রযোজিত প্রথম তিনটি নাটকের নির্দেশনা দেন প্রয়াত অভিনেতা খালেদ খান (যুবরাজ)। নাটকগুলো ছিল হেনরিক যোহান ইবসেনের এ ডলসহাউস অবলম্বনে শম্ভু মিত্র রূপান্তরিত ‘পুতুলখেলা’, মাস্টার বিল্ডার অবলম্বনে ‘কারিগর’; ইউসুফ ইদরিসের দ্য ফারফুরস অবলম্বনে ‘ভৃত্য রাজকতন্ত্র’। সৈয়দ শামসুল হকের ‘উত্তরবংশ’ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন গোলাম সারোয়ার। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘রাজা-রানী’; মনোজ মিত্রের ‘যা নেই ভারতে’ এবং নিথর মাহবুবের ‘মুদ্রাগ্রহণ’ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন মীর বরকত।