মদিনা এমন একটি জনপদ, যার রহমত, বরকত আর শান্তির বর্ণনায় কোরআন-সুন্নাহে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। মদিনা মুসলমানদের অপরিসিম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর স্বপ্নের নগরী। কারণ এই নগরীকে কেন্দ্র করেই মহানবী (সা.) ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ও আন্তুর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। মদিনা ছিল মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসার নগরী।
তাই তো এ নগরী যেন অন্য সবারও প্রিয় হয়, সে জন্য তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি মদিনাকে আমাদের কাছে প্রিয় করে দাও, যেমনিভাবে প্রিয় করেছ মক্কাকে; বরং তার চেয়েও বেশি প্রিয় করো।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৮৯)
মহানবী (সা.) আল্লাহর কাছে মদিনার সব কিছুতে বরকত দেওয়ার জন্য দোয়া করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, মক্কায় যতটুকু বরকত রয়েছে, মদিনায় তার দ্বিগুণ বরকত দাও।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৩৯২)
মদিনাকে ‘হারাম’ বলে ঘোষণা করেছেন। হারাম শব্দের দুটো অর্থ আছে। একটি অর্থ হচ্ছে নিষিদ্ধ এবং আরেকটি পবিত্র। দুটো অর্থই এ নগরীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইবরাহিম (আ.) মক্কাকে ‘হারাম’ বলে ঘোষণা করেছিলেন, আর আমি মদিনাকে ‘হারাম’ বলে ঘোষণা করছি—এর বৃক্ষসমূহ কাটা যাবে না এবং এর প্রাণী শিকার করা যাবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৩৮৩)
মহান আল্লাহ মদিনার প্রবেশদ্বারসমূহে প্রহরী নিযুক্ত করেছেন, যারা এ নগরীতে মহামারি ও দাজ্জালের প্রবেশকে প্রতিহত করবেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মদিনার পথে-প্রান্তরে রয়েছে (প্রহরী) ফেরেশতারা, (তাই) এখানে মহামারি ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৮০)
মহানবী (সা.) মদিনায় বসবাসের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। এমনকি এখানে বসবাসের ফলে দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হলেও ধৈর্যধারণ করতে বলেছেন এবং মদিনা ছেড়ে যেতে নিরুৎসাহ করেছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের কাছে এমন এক সময় আসবে, মদিনায় বসবাসরত ব্যক্তি তার চাচাতো ভাই ও আত্মীয়কে বলবে, চলো সচ্ছলতার দিকে, চলো সচ্ছলতার দিকে।
অথচ মদিনাই তাদের জন্য উত্তম, যদি তারা জানত। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, মদিনার প্রতি বিরাগভাজন হয়ে যে ব্যক্তিই এখান থেকে বের হয়ে যায়, আল্লাহ তদস্থলে তার চেয়ে উত্তম ব্যক্তি স্থলাভিষিক্ত করে দেন। সাবধান, মদিনা (কামারের) হাঁপরের মতো নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে বের করে দেবে। হাঁপর যেভাবে লোহার ময়লা বের করে দেয়, তেমনি মদিনাও তার মন্দ ব্যক্তিদের বের না করা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৪১৮)
রহমত, বরকত ও শান্তির অবারিত দার এই মদিনায় অবস্থানের জন্য কিছু আদব মেনে চলা অবশ্য কর্তব্য। যেমন: মহানবী (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণের ব্যাপারে সজাগ থাকা এবং সর্বপ্রকার বিদআত ও পাপাচার থেকে বিরত থাকা। নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মদিনায় কোনো পাপ করে অথবা পাপাচারী আশ্রয় দান করে, তার ওপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ ও সব মানুষের অভিশাপ পড়বে। কিয়ামতের দিন তার কাছ থেকে আল্লাহ কোনো ইবাদত ও দান গ্রহণ করবেন না।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৭০)
মদিনায় অবস্থানরত কারো জান-মাল ও ইজ্জতের ওপর হামলা করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা এবং কারো প্রতি মন্দ ইচ্ছা পোষণ না করা। যদিও এসব কাজ সব স্থানেই হারাম। তবে মদিনায় শক্তভাবে নিষিদ্ধ। কেননা মহানবী (সা.) বলেছেনন, ‘যে ব্যক্তি এ নগরীর অধিবাসীদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে চায়, আল্লাহ তাকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন, যেভাবে লবণ পানির মধ্যে মিশে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৪২৪)
পবিত্র এ নগরীতে অবস্থানকালে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া, ইস্তিগফার ইত্যাদিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করে রাখা। জামায়াতসহকারে মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মদিনার ফজিলত উপলব্ধি করে সে অনুযায়ী বেশি বেশি উত্তম কাজ করার তওফিক দান করুন। আমিন