তিন দিন বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকার প্রভাব পড়েছে ইলিশের বাজারে

প্রকাশকালঃ ২২ আগu ২০২৩ ১১:২১ পূর্বাহ্ণ ১৫৫ বার পঠিত
তিন দিন বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকার প্রভাব পড়েছে ইলিশের বাজারে

ত ১৭ থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত টানা তিন দিন বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকার প্রভাব পড়েছে ইলিশের বাজারে। ওই তিন দিন সাগর থেকে সব মাছধরা ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার পর গত রবিবার ওই সব ট্রলার নিয়ে মাছ শিকারিরা আবারও সাগরে রওনা হলেও আজ পর্যন্ত অনেকে ফিরে আসেননি। এর ফলে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলোতে ইলিশের সরবরাহ কমে এর দামও চড়েছে।

সোমবার (২১ আগস্ট) কক্সবাজারে খুচরা বাজারে এক কেজির ওপরের ইলিশের দাম ওঠে প্রতি কেজি এক হাজার ৪০০ টাকা। ৫০০ থেকে ৯০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের ইলিশের দাম হাঁকা হয় প্রতি কেজিতে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। আর ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের ইলিশের দাম চাওয়া হয় প্রতি কেজিতে ৬০০ টাকা। 

ভোলার চরফ্যাশনে ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি হালি বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকায়।


৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি হালি এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায়। আর ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি হালি ৬০০ টাকা দরে। জেলেরা জানান, ইলিশ নদীতে তেমন মিলছে না। সাগর থেকেই কিছু পাওয়া যাচ্ছে।

আজ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এক কেজি আকারের ইলিশের দাম হাঁকা হয় এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। দুই কেজির কাছাকাছি ওজনের ইলিশের দাম ওঠে প্রতি কেজি দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ওঠে প্রতি কেজি ৮০০ থেক ৯০০ টাকা। চার-পাঁচটিতে এক কেজি হয় এই আকারের ইলিশ বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৪০০ টাকায় এবং তিনটিতে এক কেজি আকারের ইলিশ বিক্রি হয় কেজি প্রতি ৬০০ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ ইলিশের দাম বেশি ছিল।

চাঁদপুরের বড় স্টেশন পাইকারি মাছবাজারে মণপ্রতি ৪০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজন পর্যন্ত আকারের ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে ২৮ হাজার থেকে ৩২ হাজার টাকা, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজন আকারের ৪৪ থেকে ৪৬ হাজার টাকা, এক কেজি ওজন আকারের ৬২ থেকে ৬৬ হাজার টাকা আর এক কেজি ২০০ গ্রামের বেশি ওজন আকারের ৭২ থেকে ৭৫ হাজার টাকা।


আলিপুর ও মহিপুর মৎস্যবন্দর
আজ কিছু ট্রলার মাছ নিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আলিপুর ও মহিপুর মৎস্যবন্দরে ভিড়লে ব্যস্ত সময় পার করেন ঘাট শ্রমিকরা। মহিপুরে উপস্থিত পাইকার মোহাম্মদ ছগির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৬০ হাজার টাকায়। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ হাজার টাকা দরে। ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তার চেয়ে ছোট আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ২০ হাজার টাকা দরে। 

মহিপুরের মৎস্য ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ফজলুল হক গাজী বলেন, বেশির ভাগ ট্রলার এখন মাছ শিকারে সাগরে রয়েছে। মাঝারি আকারের কিছু ট্রলার ঘাটে ফিরছে। এতে কিছুটা চাঞ্চল্য ফিরেছে। তবে গভীর সাগরে যাওয়া জেলেদের জালে ইলিশের দেখা মিললে মত্স্যবন্দরের ব্যস্ততা বাড়বে। তবে তা আরো তিন-চার দিন পর। তখন সরবরাহ বাড়লে দামও কমবে।


চাঁদপুরে সরবরাহ থাকলেও দামে নিয়ন্ত্রণ নেই
চাঁদপুরে পাইকারি বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও আকারভেদে দাম এখনো সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। এখন মূলত দক্ষিণের গভীর সাগর ও সাগর মোহনায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে এসব ইলিশ। বেপারীরা ইলিশের চালান নিয়ে ছুটছেন চাঁদপুরের বড় স্টেশন পাইকারি মাছবাজারে। এ বাজারে ইলিশের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও সরকারের কোনো নজরদারি নেই। ফলে নিজেদের মতো করে দরদাম নির্ধারণ করছেন বেপারী ও ব্যবসায়ীরা। 

বড় স্টেশনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসছেন। শুধু পাইকারই নন, সাধারণ ক্রেতারাও ভিড় করছে। ছোট ও মাঝারি আকারের ইলিশের সঙ্গে বড় আকারের ইলিশও মিলছে। তবে আকারভেদে এসব ইলিশের দামে কিছুটা হতাশ সাধারণ ক্রেতারা। 


রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আসা পাইকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এত বেশি দাম দিয়ে ইলিশ কিনে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কত করে বিক্রি করব? এই চড়া দামের সঙ্গে পরিবহন খরচ তো আছে। তারপর আছে ক্রেতাদের দর-কষাকষি।’ কুমিল্লা শহর থেকে ইলিশ কিনতে এসেছিলেন গৃহবধূ সালমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘এত কষ্ট করে এসেও দাম বেশি হওয়ার কারণে ইলিশ না নিয়েই ফিরতে হচ্ছে। নিজ পরিবারের প্রয়োজন ছাড়াও আত্মীয়-স্বজনের জন্য ইলিশ কিনতে চাঁদপুরে আসা। তবে যে দাম, এতে মাছ কেনা সম্ভব নয়।’ তাঁর মতো আরো অনেকেই ইলিশের দাম নিয়ে নিজেদের হতাশা প্রকাশ করে।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শবেবরাত জানান, কয়েক দিন ধরে বড় স্টেশন পাইকারি মাছবাজারে ইলিশের সরবরাহ স্থিতিশীল রয়েছে। তবে যে পরিমাণ ইলিশের জোগান হচ্ছে তা বাজারের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সে কারণে দাম কমছে না। 

এদিকে বাজারসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, চাঁদপুরে ইলিশের পাইকারি বাজারে সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই। এমনকি দরদাম নির্ধারণে মৎস্য কিংবা ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান নেই। এ কারণে বেপারী ও ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করে ইলিশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। 


আজ সোমবার চাঁদপুর বড় স্টেশন পাইকারি বাজারে সব মিলিয়ে ইলিশের সরবরাহ ছিল দেড় হাজার মণ। এর মধ্যে গভীর সাগরের ইলিশের পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ২০০ মণ, বাকি ৩০০ মণ পদ্মা, মেঘনা ও সাগর মোহনায় ধরা।

চাঁদপুরে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদীকেন্দ্রে কর্মরত মৎস্য বিজ্ঞানী ও ইলিশ গবেষক ড. আশরাফুল আলম বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে ইলিশের ঝাঁক গতি পরিবর্তন করলেও জেলেদের জালে ধরা পড়বেই এবং মৌসুমের শেষ সময় পর্যন্ত কাঙ্খিত পরিমাণ ইলিশ আরহণ করা সম্ভব হবে। পদ্মা ও মেঘনার কোথাও কোথাও চর, ডুবোচর এবং দূষণের কারণে ইলিশের ঝাঁক সাগর মোহনা থেকে আগের মতো ছুটে আসতে পারছে না। তবে টানা বৃষ্টিপাত এবং নদীর পানির স্রোত বেড়ে গেলে বিচিত্র স্বভাবের এবং পরিভ্রমনশীল এই মাছ অবশ্যই নদীর মিঠা পানিমুখি হবে। এই নিয়ে এসব এলাকার জেলেদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই।