চিকিৎসকরা জানিয়েছেন—খালেদা জিয়ার অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন, তবে তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য–প্যারামিটার আগের তুলনায় উন্নতি হলেও বিদেশে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তাঁর বিদেশে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ নির্ভর করছে শারীরিক অবস্থা ও মেডিকেল বোর্ডের পর্যালোচনার ওপর।
গত জানুয়ারিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে চার মাস অবস্থান করেন এবং গত ৬ মে দেশে ফেরেন।
মঙ্গলবার দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন—লন্ডন থেকে তারেক রহমান সার্বক্ষণিক চিকিৎসা কার্যক্রম তদারকি করছেন এবং দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
ডা. জাহিদ আরও জানান, যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ দল ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরাও অনলাইনে যুক্ত আছেন। গতরাতে চীনের একটি নতুন বিশেষজ্ঞ দলও ঢাকায় পৌঁছেছে। মেডিকেল বোর্ডে দেশি–বিদেশি অন্তত দেড় ডজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যুক্ত হয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁদের একজন জানান—কিছু জটিলতা বারবার কেন দেখা দিচ্ছে, তা নির্ণয়ে নতুন কিছু পরীক্ষা করা হবে।
সরকার তাঁকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি)’ ঘোষণা করায় বুধবার বিকাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের ভেতরে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী এসএসএফ দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। হাসপাতালের কেবিন এলাকা, লবি ও চত্বরজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার অতিরিক্ত সদস্যরাও অবস্থান করছেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে উত্তেজনা বাড়ায় হাসপাতালের সামনে শত শত নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা গেছে। অনেকে ছবি তুলছেন, লাইভ দিচ্ছেন, সেলফি তুলে সামাজিক মাধ্যমে আপডেট দিচ্ছেন। এতে রোগী পরিবহন ও হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য পুলিশকে বারবার জনতা সরিয়ে দিতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়ার খোঁজখবর নেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। তাঁরা পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তাঁকে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস ও চোখের নানান জটিলতায় ভুগছেন। তাঁর চিকিৎসায় এখন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের যৌথ মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে।